শতাব্দীর ভয়াবহ জীবন বিনাশী করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ দিন দিন কলেবরে বাড়ছে । বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্বের ২০৩ টি দেশে করোনায় আক্রান্ত ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। আক্রান্ত ১০ লক্ষ ৪ হাজার ৭৯১। মৃত্যু হয়েছে ৫১ হাজার ৫৭৮।
ইতিমধ্যে সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।মক্কা-মদিনায় জারি করা হয়েছে কারফিউ।
এ পরিসংখ্যান দেখে শঙ্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেডরস অধানম সারা পৃথিবীকে একজোট হয়ে লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়াতে শুরু করে এই সংক্রমণ। চীনের পর ইতালি, স্পেন এবং আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালাচ্ছে কোভিড-১৯। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এদিন রাত পর্যন্ত সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১৩ জন। আক্রান্ত প্রায় ২ লক্ষ ১৬ হাজার। শুধু নিউইয়র্কেই আক্রান্তের সংখ্যা গোটা চীনকে ছাপিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি যে আরও ঘোরালো হয়ে উঠতে চলেছে তা আন্দাজ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাই দেশজুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ মার্কিন ডলার বরাদ্দ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এর পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গোটা ইউরোপে এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষের গণ্ডি পার করে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যার নিরিখে ইতালির পরে রয়েছে স্পেন। সেখানে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ৯৫০ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজারের গণ্ডি। অন্যদিকে ইরানে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় আমেরিকারও আগে রয়েছে ইতালি। তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলার ফলে ভেঙে পড়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে সে দেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে ইতালির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বেলজিয়ামে মৃত হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে করোনার প্রকোপে বিশ্ব অর্থনীতি যে বড় ধাক্কা খেতে চলেছে তা স্বীকার করে নিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। আগের ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে সরে এসে বুধবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (ডিইএসএ) জানিয়েছে, বৃদ্ধি নয় উল্টে প্রায় ১ শতাংশ ঘাটতি দেখা দেবে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ডিইএসএ পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২০ অর্থবর্ষে বিশ্ব অর্থনীতিতে ০.৯ শতাংশ ঘাটতি দেখা দেবে।
এরইমধ্যে ইজরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর মিলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, মন্ত্রী ইয়াকভ লিটসমান ও তাঁর স্ত্রীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে তার আগে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সহ গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেই বেন সাবাতের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছিলেন ইয়াকভ। বর্তমানে কোহেন এবং সাবাত দু’জনকেই আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। অনেক আগে থেকেই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন নেতানিয়াহুও। তাঁর অবশ্য করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে আরও এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হওয়ায় সে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৪। একইসঙ্গে চীনে নতুন করে ৩৫ জন বিদেশি নাগরিকের শরীরে মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। তাছাড়া বুধবার হুবেই প্রদেশে আরও ৬ জনের মৃত্যুতে সেদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩১৮।