নামটুকু শুনলে ৭১ এর যুদ্ধ এবং রাজাকার এ কথাগুলোই মাথায় আসে সবার প্রথমে। আজও ৭১ এর কৃতকর্মের জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চায়নি। পাকিস্তান বাংলাদেশ হতে প্রায় ৭ গুন বড় এবং বিশ্বের অন্যতম তুলা উৎপাদক দেশ। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাকিস্তানের ট্যুরিজম সেক্টর বাংলাদেশ থেকে উন্নত।
তাদের রিসোর্স বাংলাদেশ থেকে বেশী হওয়া সত্বেও তাদের ভারী শিল্পসমূহ,যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-গার্মেন্টস,ফুড এবং বেভারেজ, ইলেকট্রনিক্স সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্প ধীরে ধীরে বাংলাদেশে শিফট হয়ে আসছে। পাকিস্তানের সড়ক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা তুলনামূলক ভাবেও বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। তারা ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রজেক্টের আওতায় সরাসরি চীনের দ্বারা যুক্ত। এত প্রাকৃতিক সম্পদ, এত রিসোর্স, আর ২২ কোটি এর জনবল নিয়েও পাকিস্তানী শিল্প কেন বাংলাদেশে আসছে?
উত্তর, শিল্পের প্রয়োজনীয় পরিবেশ,বিদ্যুৎ,সস্তা অবকাঠামো সব কিছুরই অভাব রয়েছে পাকিস্তানে।এ কথা শুধু আমরা না ,পাকিস্তানীরাও স্বীকার করে। আবার চীনা সস্তা পণ্যের দাপটে পাকিস্তানী ক্ষুদ্র শিল্প নিজেই পাকিস্তানে ধুকে ধুকে চলছে।
ফলাফল,পাকিস্তানী গার্মেন্টস শিল্পের বড় বড় প্রতিষ্ঠান সমুহ ৫-৭ বছর আগেই বাংলাদেশে শিফট করে আসা।কারন বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে হলে “লাল ফিতা” নামক দুর্নীতি এবং বিড়ম্বনা কম। সহজ শর্তে বিদ্যুৎ, জ্বালানী, সস্তা অবকাঠামো, নিরাপত্তা, সস্তা শ্রম ইত্যাদি।এমন নয় বাংলাদেশে ও চ্যালেঞ্জ নেই। তবে তা পাকিস্তানের তুলনায় কম। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানী হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দীকি নিজেও তা স্বীকার করে। তিনি নিজেও আশা করেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক ধীরে ধীরে নতুন মাত্রা পাবে।
একটি স্থিতিশীল, উন্নত বাংলাদেশ এবং ভাল সম্পর্ক পাকিস্তানের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গার্মেন্টস সেক্টরে আরো নতুন কিছু পাকিস্তানী শিল্পপতি বাংলাদেশের ইকোনমিক অঞ্চল সমূহে বড় মাপের বিনিয়োগ করতে চলেছে। পাকিস্তান নিজেও এখন অনুভব করতে পারে, বাংলাদেশ তাদের ব্যবসায় অন্যতম বৃহৎ সহায়ক হতে পারে।মানুষের সহমর্মিতা এক্ষেত্রে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পারস্পরিক সম্পর্ক অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করে পাকিস্তান।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ দিয়ে তা শুরু হয়েছে।যা সামনে আরো বিস্তৃত হবে। ভারতের সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে সামনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শীতল হবে এটিই স্বাভাবিক। কূটনৈতিক সম্পর্ক যতই শীতল হউক, বাংলাদেশ-মিয়ানমার ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। তেমনিভাবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং ব্যবসা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। পাকিস্তান নিজেও জানে, ভারতের সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়া তাদের জন্য সুযোগ।আর সে সুযোগ পাকিস্তানকে দেয়া উচিত।
বাংলাদেশে সাফল্যে পাকিস্তানের ঈর্ষান্বিত হবার যথেষ্ট কারন আছে, কারন পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশের সমকক্ষ নয়।আর তার জন্য পাকিস্তানের হিংসা,আফসোস করা নতুন কিছু নয়। এছাড়া,পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা সহ সব বিনিয়োগেই নজরদারী আবশ্যক। কারন পাকিস্তানের বাংলাদেশ নিয়ে অতীত ইতিহাস এতটা সুখকর নয়।
পাকিস্তানীরা আমাদের “মুসলিম” ভাই এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে মনে করলেও, তারা কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ব্যপারে নিজেদের দোষগুলো স্বীকার করেনি। তাদের পাঠ্যপুস্তকে ভারত বাংলাদেশ আলাদা করেছে বলা হলেও আজ অবধি কেন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ যে ধর্মনিরপেক্ষ তা তাদের জানা হয়নি। পাকিস্তানের উচিত এসব ইস্যুগুলোতে কাজ করা।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার প্রধানমন্ত্রীত্বের পূর্বে নিজে অনেকবার ১৯৭১ এ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তান্ডব, পশ্চিম পাকিস্তানের ভুল, নির্বিচারে মানুষ হত্যা, দেশান্তরী করন, ধ’র্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন। ক্ষমতায় যাবার পর এসব না বললেও তিনি অনেকবার ৭১ নিয়ে বলেছেন। পরিবর্তনটুকু আসা উচিত দু:খপ্রকাশ কোন সমাধান নয়। জাপান,আমেরিকার মত রাষ্ট্র তাদের কৃতকর্মের জন্য মাফ চাইতে পারলে মুসলিম নামধারী পাকিস্তান কেন চাইতে পারবেনা?
পাকিস্তানের উচিত তাদের ইতিহাস মনে রাখা। পাকিস্তান নিজের ইতিহাস আজো মনে রাখেনি। এভাবে চলতে থাকলে পাকিস্তানীরা হয়ত সামনে আরেকবার নিজদেশের ভাংগন দেখতে পারে।