কোভিট-১৯ এর আগ থেকেই ভারতের অর্থনীতির অসুখ শুরু হয়। ধুকতে থাকে ভারত। অটো ইন্ডাস্ট্রিতে লাখো মানুষ জব হারায়। কারখানা বন্ধ হয়। মুডি’স জানিয়েছিল তারা ভারতের ঋনের লেভেল পর্যবেক্ষণে রাখবে।
মুড়ি’স করোনার প্রভাব বিবেচনায় বিশ্লেষণ করে বলেছে চলতি অর্থবছরে ভারতের কোন জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে না অর্থাৎ গ্রোথ হবে ০%। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল্র ২০২২ সালে ভারত ৬.৬% প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি ২০২১ অর্থবছরে জিডিপির ৫.৫% হয়ে যেতে পারে যেখানে ভারত ভেবেছিল তারা ৩.৫% এর ভেতরেই আটকে রাখতে পারবে।
ভারত এই পর্যন্ত ১.৭ ট্রিলিয়ন রুপি বা $২২.৫৩ বিলিয়ন ডলারের স্টিমুলাস প্যাকেজ নিয়েছে শুধু সরাসরি নগদ অর্থ এবং খাদ্য সহায়তার জন্য। সেই সাথে এসএমই খাতের জন্য ও।
৮ সপ্তাহের অধিক লকডাউনের জন্য সেদেশে সরকারি রাজস্ব আদায় ব্যাহত হবে। ফলে ঋন পরিশোধের সক্ষমতা আরো কমবে ভারতের। ধারনা করা হচ্ছে ভারতের ঋন জিডিপির ৮১% হতে পারে।
বিষয়টি ভয়ঙ্কর এই কারনে যে বাংলাদেশের অবস্থা যে কতটা খারাপ হবে সেটা এই রিপোর্ট থেকেও কিছুটা অনুমান করা যায়। চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ০% হবেনা। কিন্তু ৮% এর বেশি প্রবৃদ্ধি থেকে হঠাৎ করে ৩% এ নেমে যাওয়া কম ধাক্কা নয়। এই ৩% প্রবৃদ্ধিও হত না। কেন হচ্ছে? গত জুলাই মাস থেকে অর্থবছর শুরু হয়েছে। এই বছর মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক ছিল। অর্থাৎ বছরের ৯ মাস স্বাভাবিক ছিল শুধু শেষের তিন মাস করোনার ধাক্কা সরাসরি পড়েছে। শুধু একারনেই এই বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি এই তিন মাসের জন্য ৮%+ থেকে কমে ৩% এ নামতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য ১০০০ বিলিয়ন টাকার প্যাকেজ নিয়েছে। কিন্তু অর্থনীতির মূল এবং প্রধান অংশ হল কনসিউমার এক্সপেন্ডিচার। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে খরচ বাড়ানো সম্ভব না। আর খরচ না বাড়ালে বৃদ্ধি সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে প্রাইভেট কোম্পানিগুলিতে প্রচুর জব ছাটাই চলছে।
এই পরিস্থিতি থেকে মোকাবিলায় আমাদের কার্যকর পরিকল্পনা এবং সেই মোতাবেক বাস্তবায়ন দরকার। এবার একটি সুসংবাদ দিতে চাই। ভারতের মত বাংলাদেশেও রাজস্ব ঘাটতি থাকবে অনেক বেশি। ফলে ঋন পরিশোধের ক্ষমতা কমবে। কিন্তু যেহেতু আমাদের ঋনের পরিমান বিশ্বের সব থেকে কম ঋণগ্রস্ত দেশের মধ্যে একটি তাই আমরা ভারত বা পাকিস্তান থেকে কিছুটা নিশ্চিন্তে। আর বড় রকমের সুসংবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে জি-২০ ও বিশ্বব্যাংক প্রায় $২০ বিলিয়ন ডলার ঋনের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কথা ভাবছে। ছাড়ের আওতাধীন দেশগুলির ভেতর বাংলাদেশ রয়েছে। ফলে ঋন নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কম।
আমাদের সব থেকে বড় দুশ্চিন্তা হওয়া উচিত ভিয়েতনাম। কারন ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে তারা অনেক এগিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে রপ্তানি বাজার ভিয়েতনামের কাছে ছেড়ে দেয়া থেকে বাঁচতে গেলে এখনই সকলকে এগিয়ে এসে উত্তম পরিকল্পনা করে সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে।
লেখকঃ ওয়াসিম শাহিন