অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করতে যাচ্ছে ভারত-ইসরায়েল। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি সাব-ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে।
দু’দেশের প্রতিরক্ষা সচিব এবং সমরাস্ত্র নির্মাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা ওই ওয়ার্কিং গ্রুপে রয়েছেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সূত্রের খবর, দ্বিপাক্ষিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম অন্য দেশে বিক্রি করা হবে।
অস্ত্র এবং সমর সরঞ্জাম রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছে ইসরায়েল। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের পরেই তাদের অবস্থান।
গত আর্থিক বছরে ইসরায়েল থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৭,৩৭০ কোটি রুপি) প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করেছে ভারত।
ভারতের প্রতিরক্ষা ও গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও)-র সঙ্গে এরই মধ্যে একাধিক যৌথ কর্মসূচিতে যুক্ত রয়েছে ইসরায়েল।
ডিআরডিও এবং ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের যৌথ উদ্যোগে ভুমি থেকে আকাশ ‘বারাক’ ক্ষেপণাস্ত্রের তিনটি সংস্করণ উৎপাদনের কাজ চলছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র পেতে ভারতীয় স্থলসেনা ১৬,৮৩০ কোটি, বিমানবাহিনী ১০,০৭৬ কোটি এবং নৌ-বাহিনী ২,৯০৬ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। হেরন ও সিয়ারচার-২ গোয়েন্দা ড্রোনের পাশাপাশি ইসরায়েলি বোমারু‘কিলার ড্রোন’ হারপ-এর ব্যবহারও শুরু করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলের তৈরি স্পাইস-২০০০ বোমার পাশাপাশি কুইক রিঅ্যাকশন বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্পাইডার’ এবং বিমানে ব্যবহৃত ‘পাইথন’ ও ‘ডার্বি’ ভারতীয় সেনার অন্যতম অস্ত্র।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর অন্যতম অস্ত্র প্রিসিশন গাইডেড বোমা (স্মার্ট বম্ব) ‘মেইজ’ও রয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অস্ত্র ভান্ডারে।
হেরন ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষেপাণাস্ত্রের নিশানা নির্ভুল করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত সহায়তায় একটি গবেষণা কর্মসূচিও শুরু করেছে ডিআরডিও। এই প্রকল্পের নাম ‘প্রজেক্ট চিতা’। এছাড়া ‘অ্যারোস্ট্যাট’ এবং ‘গ্রিন পাইন’ রাডারের কার্যকরিতায় খুশি ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইসরায়েল থেকে ৬৬টি অত্যাধুনিক ‘এয়ার ডিফেন্স অ্যান্ড ফায়ার কন্ট্রোল রাডার’ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আনুমানিক খরচ হবে ৪,৫৭৭ কোটি রুপি।
কয়েক বছর আগে প্রায় ৮,১০৭ কোটি টাকা দিয়ে ইসরায়েল থেকে তিনটি ‘ফ্যালকন’ অ্যাওয়াক্স কিনেছিল ভারত। রাশিয়ার তৈরি সামরিক পরিবহণ বিমানে আইএল-৭৬-এ বসানো এই ইসরায়েলি নজরদারি ব্যবস্থার কাজ হল, ভারতীয় বিমানবাহিনীর ফাইটার জেটগুলোকে নিখুঁত ভাবে লক্ষ্য চিহ্নিত করতে সাহায্য করা।
পাশাপাশি, শত্রুপক্ষের বিমানবাহিনীর তৎপরতার উপর নজরদারির কাজও করতে পারে এটি। গত বছর পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি আস্তানায় হামলাকারী ১২টি মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেটকে পরিচালনা করেছিল এই ইসরায়েলি অ্যাওয়াক্স।
৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘ফ্যালকন’ ৩৬০ ডিগ্রি ক্ষেত্র জুড়ে নজরদারিতে সক্ষম। কিন্তু ভারতে তৈরি অ্যাওয়াকস ‘নেত্র’র ‘নজরদারির পরিধি’ ২৪০ ডিগ্রি। চলতি মাসেই প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্যালকনের আরো দু’টি উন্নততর সংস্করণ ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি (সিসিএস)।
যৌথ উদ্যোগে অ্যাওয়াক্স নির্মাণ কর্মসূচি নিয়েও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে।