২০১৯ এর মাঝামাঝিতে পাকিস্তানের কোষাগারে মাত্র $৭ বিলিয়ন মওজুদ ছিলো, যা দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ মাসের জরুরী আমদানি করা যেত। সেই অর্থ দিয়ে ৩ মাসের পর কেমন করে দেশ চলবে জানা ছিলো না, আইএমএফ গড়িমসি করছিলো, তার উপর ছিলো চীনের কাছ থেকে নেওয়া হস্তিসম ঋণের সুদ পরিশোধের দায়।
চোখে যখন অন্ধকার দেখছিলো নূতন ক্ষমতায় আসা অনভিজ্ঞ ইমরান খানের সরকার, সমস্ত প্রতিকূলতা তখন এক লহমায় দূর হয়ে গিয়েছিলো সাঊদী আরব উদার হস্তে তাঁর ভিক্ষার ঝুলি খুলে দেওয়ায়। $৬ বিলিয়নের ঋণ আর $২০ বিলিয়নের বিনিয়োগ গ্বয়াদর বন্দরে। পাক কোষাগার ভরে উঠেছিলো আম্রিকী ডলারে। পাকিরা গর্ব করে বলতো “সাঊদীওয়ালে হাম পাকিস্তানীয়োকো বাহুত পাসান্দ কারতে হ্যায়।” এটা ছিলো সেই সব দিন, যখন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজে চালক সেজে সাঊদী যুবরাজের গাড়ি চালাতো।
অর্থনীতি শক্ত পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে দেখে আইএমএফও আর বাহানা না করে অনুমোদন করেছিলো $৬ বিলিয়নের নূতন ঋণ। কোমরভাঙা পাকিস্তান বেঁচে গিয়েছিলো সেযাত্রা।
পরবর্তী এক বছরে পাক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। রফতানি বা উৎপাদন না বাড়লেও আরো নূতন ঋণ পেয়েছে চীন থেকে। ভিক্ষার হলেও তার ট্যাঁক এখন ভালোই গরম। সোজা সাঊদীকে নির্দেশ দিয়েছে কাশ্মীর নিয়ে যেন ওআইসি সরাসরি অবস্থান নেয়।
বিষয়টি অতোটা সহজ নয় যদিও। পাকিস্তান একদিকে কাশ্মীরীদের স্বাধীনতার দাবী সমর্থন করে। অপরদিকে পুরো কাশ্মীরকে নিজের দেশের অংশ দেখিয়ে নূতন সরকারী মানচিত্র প্রকাশ করে। মুসলমান কাশ্মীরীদের জন্য তার সকাল বিকাল বিলাপ, জাতিসংঘও মাতিয়ে এসেছে কাশ্মীরীদের অধিকারের দাবীতে, অথচ নিজেদের দখলে থাকা কাশ্মীরের বিশাল খন্ড উপহার হিসেবে দিয়ে দিয়েছে চীনের কাছে। চীনের পুনঃপুন নূতন আক্রমণ করে ভারতীয় কাশ্মীরের কব্জা নেওয়াতেও পাকিস্তান বেশ উদ্বেলিত। তাদের ধারণা চীন এর মাধ্যমে পাকিস্তানকেই সাহায্য করছে!
যদিও চীন আসলে দিনকেদিন কাশ্মীরে নিজের দখল বাড়াচ্ছে তিব্বতের সাথে সংযোগ পথ সুরক্ষিত করার জন্য। তিব্বতে দখল মানে উপমহাদেশের অর্ধেক পানির উৎসে চীনা কব্জা থাকা।ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মতো লাফাতে থাকা পাকিদের দেখে তারাও বেশ আমোদিত।
কাশ্মীরের ঐ অধিবাসীরা যে মুসলমান বিদ্বেষী চীনের পাল্লায় গিয়ে পড়ছে, এটা নিয়ে পাকের কোন দুশ্চিন্তা নেই। চীন এমন এক দেশ যেখানে মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়, দাঁড়ি আর রোজা রাখার বিরুদ্ধে আছে শক্ত আইন আর শত শত নিরীহ মুসলমানকে “সংশোধন কেন্দ্রে” আটকে অত্যাচার করা হয়, যেন মুসলমান হওয়াটাই তাদের জন্য একটা দূষণীয় অপরাধ। সেই চীনের হাতে কাশ্মীর চলে যাওয়ায় পাকিস্তান খুশিতে বগল বাজাচ্ছে!
সাঊদী বা ওআইসি পাকিস্তানের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য সমস্ত মুসলমান দেশগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থাটিকে ব্যবহৃত হতে দেবেনা নিশ্চয়ই।
কূটনীতিতে ব্যর্থ হয়ে গোস্বা করেছে পাকিস্তান, শিয়া দেশ ইরান আর সাঊদী বিরোধী তুরষ্ক/মালয়েশিয়াকে নিয়ে নূতন জোটে যোগ দিয়েছে। ক্ষুদ্ধ সাঊদী নিজের দেওয়া ঋণের অর্থ ফেরত চেয়ে বসাতে চীনের কাছ থেকে আবারও মোটা অর্থের আরেকটি ধার নিয়ে সাঊদীর কাছে দায় শোধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। এখন তারা চীনের কেনা গোলাম, চীন বললে শিয়া ইরানের সাথে বন্ধুত্ব করবে পাকিস্তান, হুকুম দিলে কুকুরের মতো লেজ নাড়বে অথবা বাঁদরের মতোন লাফাবে।
$৭০ বিলিয়নের ঋণে তৈরী গ্বয়াদরে কোন দেশ বিনিয়োগ করে না, মাত্র যে দুইটা দেশ যথা সাঊদী ও আমিরাত, মুহুর্মুহু বালুচ জঙ্গি হামলা স্বত্বেও সেখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছিলো, পাকিস্তানের এই বিশ্বাসঘাতকতার পর, তারাও আর বিনিয়োগ করবে এমন আশা ক্ষীণ।