সিরাজুর রহমানঃ
ভারতের দ্যা হিন্দু নিউজের তথ্যমতে, ইরান সাম্প্রতিক সময়ে ভারত কে চাবাহার বন্দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের রেল প্রজেক্ট থেকে বাদ দিয়েছে ফান্ড সরবরাহে দেরী করার জন্য। আসলে চার বছর আগে ভারত ও ইরান এক চুক্তি স্বাক্ষর করে চাবাহার বন্দর থেকে ইরান আফগানিস্তান সীমানা জাহেলদান পর্যন্ত এক সুবিশাল রেল লাইন নির্মাণ করার জন্য।কিন্তু এখন ইরান বলছে ওই রেল লাইন সে নিজেই নির্মাণ করবে কারণ হিসেবে ইরানের সরকার জানিয়েছে, ভারত এর এই প্রকল্পের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। তবে ভারত পরবর্তীতে এই প্রজেক্টে সংযুক্ত হতে পারবে।
গত সপ্তাহে ইরানের রেল ও আরবান ট্রান্সপোর্ট মন্ত্রী এসলামি ৬২৮ কিলোমিটার লম্বা এই দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ কাজের সূচনা করেন, সেটা আফগানিস্তান এর জেরেঞ্জ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। গোটা প্রজেক্টটি ২০২২ সালের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দ্যা হিন্দু পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান ৪০০ মিলিয়ন ডলার এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল এবং যেটা এখন ইরান তার নিজস্ব ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে ব্যয় করে সম্পন্ন করবে।
তবে মনে করা হয়, ইরান থেকে ভারতের পর্যায়ক্রমে তেল আমদানি কমিয়ে দেওয়া এবং ইরানে ২৫ বছর মেয়াদী বিশাল আকারের চীনের ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সুবিধা ঘোষণা আসায় ইরান আর ভারতের সাথে এই ৪০০ মিলিয়ন ডলারের রেল প্রজেক্ট এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছেনা।
অবশ্য আগে ভারত, ইরান ও আফগানিস্তা এই তিনদেশের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, যাতে ভারতের সরকারি ইণ্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেড আফগানিস্তান থেকে মধ্য এশিয়া প্রর্যন্ত এক রেল রুট তৈরী করবে।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদির ইরান সফরের সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট রাহমানী আফগানিস্তান এর প্রেসিডেন্ট ঘনির সঙ্গে এক চুক্তিতে এই রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল ভারতের সরকারি ইণ্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের। আর এই চুক্তির আওতায় ১.৬০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ভারতের সরকারি ইণ্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। যাতে প্রযুক্তি ও সার্ভিস দিয়ে ইরানের রেল যোগাযোগ মন্ত্রক কে সাহায্যের কথা ছিল ভারতের।
তবে ভারতের সরকারি ইণ্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর প্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের একাধিক বার সাইট ভিজিট করা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে এই প্রজেক্ট শুরু করা সম্ভব হয় নি।
যদিও অবশ্য মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের চাবাহার ও আফগানিস্তানের জাহেলদানের মধ্যে নির্মিত রেলপথ ও বন্দর কে এই অবরোধের বাইরে রেখেছিল। তা সত্ত্বেও ভারতের কোন আর্থিক সংস্থা এতে বিনিয়োগ করতে রাজী হয়নি ভবিষ্যতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ভয়ে।
ভারত কিন্তু ইতিমধ্যেই মার্কিন অবরোধের কারণে ইরান থেকে তেল কেনার পরিমান একেবারেই সীমিত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আর এটাও একটা অন্যতম কারণ হতে পারে ইরানের চাবাহার রেল প্রজেক্ট থেকে ভারতকে বাদ দেবার।
২৫ বছরের এক দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চিন কিন্তু ইরানকে ভবিষ্যতে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের বিনিয়োগের কথা বলছে। যার আওতায় চীন চাবাহার বন্দরের কাছে একটি তেল শোধনাগার নির্মান করবে। তাছাড়া বন্দরে ডিউটি ফ্রি টার্মিনাল ও চাবাহার বন্দর পরিচালনায় বড় ধরণের ভূমিকা পালনের সুযোগ দেয়া হতে পারে চীনকে। যদিও ভারতের আর্থিক সহায়তায় তৈরি চাহাবার সমুদ্র বন্দর চীনকে লীজ দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ ইরানের প্রশাসন সরাসরি অস্বীকার করেছে। তবে চাহাবার সমুদ্র বন্দরের সাথে পাকিস্তানের গাউদার বন্দরের যুক্ত করার মহা পরিকল্পনার বিষয়টি ইরান উড়িয়ে দেয় নি।
১৮ পাতায় প্রকাশিত এক গোপন প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায় যে, চীনের বন্দর এ জেশেক ইরান এর ৩০০ কিমি লম্বা এক সড়ক যোগাযোগ চীন নির্মাণ করবে।
তার পাশাপাশি শুল্ক মুক্ত বন্দর হিসাবে চীন এই চাবাহার বন্দরের একটি অংশ নিজেই ব্যাবহার করতে পারবে। সেখানে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণ করবে চীন। আর ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগর সংলগ্নে চীনের ক্রমোবর্ধমান উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং বিশাল বিনিয়োগের আড়ালে চীন কার্যত এতদ অঞ্চলে তার ভবিষ্যত মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে হরমুজ প্রনালী আশপাশ অঞ্চলে পাকিস্তান ও ইরানে বন্দর ব্যাবহার ও ভবিষ্যতে সামরিক উপস্থিতির ফলে চীনের আধিপত্য বিস্তৃত হওয়ার সমুহ সম্ভবনা সৃষ্টি হতে পারে। যা ভবিষ্যতে ভারতের তেল সুরক্ষার জন্য বিপর্জনক ও স্পর্শকাতর একটি ইস্যু হয়ে দেখা দিতে পারে।