১৫ই জুলাই, ২০১৬’র রাত প্রায় ১১০০টা, শুক্লপক্ষের চাঁদের ভরা জোৎস্নায় তুরষ্কের আপামর জনসাধারণ সড়কে নেমে এসেছিলো সেনাদ্রোহের প্রতিবাদে এবং শেষপর্যন্ত এরদোয়ানকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করে তবেই তারা ক্ষান্ত হয়েছিলো।
কর্কট সংক্রান্তির সেই ভোরে দুইটা ঘটনা ঘটেছিলো, এক তুরষ্কের ওপর এরদোয়ানের পূর্ন কর্তৃত্ব স্থাপন আর এরদোয়ানের জন্য এক অজেয়, সর্বব্যাপী মাহাত্ম্যের সৃষ্টি।
মূর্তির গরিমা আকারে মূর্তির চেয়েও অনেক বড় হয়, আর শাসকের দম্ভ তাকে ধ্বংসাত্মক পথে টেনে নিয়ে যায়। তুর্কী যেইদিন রাশিয়ার সু২৪ টহল বিমানকে বিনা প্ররোচনায় মধ্য আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছিলো, সেদিনই বোঝা গিয়েছিলো মধ্যপ্রাচ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে আর এক পরশুরাম, মহানায়ক হয়ে উঠবার প্রচন্ড মনোবাসনা নিয়ে।
ন্যাটোর প্রভাব বলয়ের বাইরে এসে রাশিয়ার সাথে সামরিক চুক্তি করেছে তুর্কী, অনেকটা পশ্চিমা বিশ্বকে সোজা বার্তা দেওয়া যে এরদোয়ান কাউকে পুছে চলে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সর্বদা হুমকীর মুখে রেখেছেন তিনি, তুরষ্কের সীমান্ত খুলে দিয়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের ইউরোপে পাঠিয়ে দেবেন যদি তাকে অসন্তুষ্ট করা হয়। যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে সাইপ্রাসের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র কব্জা করে নিয়েছেন, দূর্বল ও দরিদ্র দেশটির কোন প্রতিবাদকে কানেই তোলেননি।
এধরণের একের পর এক বিজয় যেকাউকেই অনেক বেশী টালমাটাল করে তোলে। য্যামন প্রচন্ড বিস্বাসে ভার্সেই চুক্তি ভেঙে হিটলার রাইনল্যান্ড দখল করে নিয়েছিলো অধিকাকার ফরাসী সেনাবাহিনীর কব্জা থেকে, ঠিক ত্যামন এক মূহুর্ত য্যান অপেক্ষা করছিলো এরদোয়ানের জন্য, আর এসেও গ্যালো যখন সিরীয়ায় নিযুক্ত মার্কিন সেনাচৌকীর দিকে গোলা ফেললো তুরষ্কের সেনাবাহিনী।
এরদোয়ান ঠিকই হিসাব করেছিলেন,১৯৩৬এর ফরাসীদের মতোই ট্রাম্পেরও সামান্যতম ইচ্ছে ছিলো না বলীয়ান তুর্কী বাহিনীর মুখোমুখি হবার, বরঞ্চ আম্রিকা নিজের ৭ বছরের সমরমিত্র কুর্দীদের পরিত্যাগ করলো আর সাফ জানিয়ে দিলো ওই অঞ্চল ছেড়ে যথাসম্ভব শীঘ্র সরে আসবে মার্কিন বাহিনী৷ চরম বিজয়ের এক মূহুর্ত তুরষ্কের জন্য!
হিটলার যখন প্রবল প্রতাপে সামনে এগুচ্ছিলো, সেধে তার সাথে যোগ দিয়েছিলেন ইতালির বেনিতো মুসোলিনি, যেহেতু দুজনেরই আদর্শ ছিলো এক।
তুর্কীর এই বিজয়ে সবার আগে উতলা হয়ে উঠলো পাকিস্তান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গায়ে পড়ে জানিয়ে দিলেন পাকিস্তান সবসময় তুর্কীর পাশেই থাকবে, আর এভাবেই বুনিয়াদ তৈরী হলো য্যান ইসলামী অক্ষশক্তির!
অনেক সময় যা হবার না, তাই হয়ে যায়, ১৯৩৯শের জার্মানীর সম্মুখে দাঁড়ানোর কোন ক্ষমতাই ইংল্যান্ডের ছিলোনা, বিশেষ করে মাত্র ৬ সপ্তাহে বৃহৎ ঔপনিবেশিক শক্তি ফরাসীর পতনের পরে। কিন্তু একাকী ইংল্যান্ড যুক্তি না, সাহস নিয়ে সামনে রুখে দাঁড়িয়েছিল, যা বিশ্ব ইতিহাসের রোখ বদলে দিয়েছিলো এক লহমায়।
কোন সুস্থ মানুষ যা চিন্তাও করবে না, এক তৃতীয়াংশ আকারের এক সেনাবাহিনী নিয়ে তুর্কীর সামনে রুখে দাঁড়িয়েছেন আল আসাদ। গত ৮ বছর ধরে তিনি শুধু যুদ্ধই করছেন। ৮৬ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিদ্রোহী আর প্রায় ১০০০টি বিভিন্ন দলই শুধু নয়, আমেরিকা সহ প্রায় ১০টি দেশের সেনা লড়ছে সিরীয়াতে। তাদের সবার সাথে লড়ে শুধু টিকেই থাকেন নি, বিজয়ী হয়েছেন সিরীয় এই সিংহ। কোথাকার কোন এক এরদোয়ানকে তিনি থোড়াই পরোয়া করেন! তার উপর অগাধ আস্থা রেখে দুই বিশ্বস্ত ও পরিক্ষীত বন্ধু রাশিয়া ও ইরান সোজা বলে দিয়েছে, যা কিছু হোক তারা সিরীয়
াকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে।
াকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে।
এর সাথে সাথে ভেঙে গ্যাছে সিরীয়াতে নিজের এক ছোট্ট তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাবার এরদোয়ানের সেই মধুর স্বপ্নটা। দুনিয়ার সামনে মহাপরাক্রমী আর মুসলমান বিশ্বের সামনে নূতন নেতা হিসেবে আবির্ভাব হবার বাসনাও প্রায় শেষ, তার উপর রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প, যে কিনা কাউকে হাতে না ভাতে মারেন, তুর্কীর উপরেও চড়িয়ে দিয়েছেন শক্ত অর্থনৈতিক অবরোধ। এরদোয়ান জানেন তিনি এই যুদ্ধ জিততে পারবেন না। অতো শক্তি তারও নেই। তবুও গোঁয়ার, অনেক বেশী আস্ফালন করে এখন হুট করে মিঁইয়ে যেতে পারছেন না। তাই ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধ থেকে তিনি ফিরে আসবেন না, ঘটনা যেদিকেই মোড় নিক, সিরীয় যুদ্ধ চলবেই।
কে জানে, এতো সহস্র নিরীহ মানুষের জীবনের দায় কে নেবে?