বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভুয়া সনদ বিক্রি হচ্ছে এমন খবর শিরোনাম হয়েছে ইতালির একাধিক জাতীয় দৈনিকে। রোম থেকে প্রকাশিত শীর্ষ দৈনিক ‘ইল মেসেঞ্জারো’সহ প্রথম সারির বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়। ইতালির বাইরে বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি আলোচনায় আসায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
এদিকে ঢাকা থেকে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ায় এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করেছে ইতালি সরকার।
এখন বাংলাদেশিদের এড়িয়ে চলছে ইতালীয়রা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও নেই তাদের উপস্থিতি। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা।
ইতালির শীর্ষ জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ইল মেসসাজ্জেরো’র বুধবার প্রধান খবর ছিল, বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট নিয়ে ইতালিতে ফেরত যাওয়াদের নিয়ে।
এর মধ্যে ইতালির কেন্দ্রীয় অঞ্চল লাৎসিওর বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যাপক পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। ইতালির রাজধানী রোম একইসঙ্গে এই অঞ্চলটিরও রাজধানী। লাৎসি অঞ্চলে করোনা মোকবিলায় কর্তব্যরতরা ধারণা করছেন, গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ৬০০ কভিড-১৯ রোগী ইতালিতে এসেছেন। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন।
প্রতিবেদনটিতে ঢাকায় করোনা সার্টিফিকেট জালিয়াতির চিত্রও উঠে আসে। এতে বলা হয়, ফ্লাইটে চড়তে ঢাকায় সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে ভুয়া স্বাস্থ্যসনদ বিক্রি হচ্ছে।
ইতাল-বাংলা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ তাইফুর রহমান শাহ জানান যে, বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট নিয়েই ইতালিতে ফিরেছেন এসব অভিবাসীরা।
বাংলাদেশ থেকে ইতালির রাজধানী রোমে যাওয়া একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। করোনার জীবাণুবাহী বাংলাদেশিদের যাত্রীদের স্থানীয় প্রশাসন ‘সত্যিকারের বোমা’ হিসেবে আখ্যা দেয়। আঞ্চলিক গভর্নর নিকোলা জিঙ্গারেত্তি বলেন, আমরা এই বোমাটি তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করেছি।
বাংলাদেশ থেকে আগতরা কীভাবে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছে সেই গল্প তাইফুর রহমানের বরাতে উঠে আসে পত্রিকাটিতে। ঢাকা ত্যাগ করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইস্যু করা স্বাস্থ্য সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে অনেকে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বিদেশে কর্মস্থলে ফিরতে ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করছেন।
ইতাল-বাংলা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে উঠে আসে, ঢাকায় রিজেন্ট হাসপাতালের কয়েকটি শাখায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ঘটনাও
কাস্টমারদের করোনা টেস্ট করানোর পর সেখানে নতুন করে ১২ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সেসেনাতে করোনা আক্রান্ত আরও একজন বাংলাদেশি অন্যান্য বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনা সংক্রমিত করেন।
রোমের এএসএল রোমা টু এলাকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলা ভাষায় নির্দেশনা প্রচার করেছে কর্তৃপক্ষ। পহেলা জুন থেকে যারা ইতালিতে ফিরেছে তাদের করোনা টেস্ট করানোর জন্য সরকারি কেন্দ্রে যেতে আহ্বান করেছে। এ ছাড়া সংক্রমণ রোধে এই সপ্তাহে জুমার জামাতে অংশ নিতেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে অঞ্চলটির বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউন পরবর্তী ফিয়ামিকিনোতে দুইটি ব্যবসায়িক কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেখানে এক বাংলাদেশি কর্মীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় কেন্দ্র দুইটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে তিনি ইতালিতে ফেরত গিয়েছিলেন।