ভারতের বিহার রাজ্যের কিষাণগঞ্জের বাসিন্দা শিবকুমার। গত সোমবার তার বিয়ে হয় নেপাল সীমান্তের সিংহীমারি গ্রামের মেয়ে সুনীতার সঙ্গে। বিয়ের পিঁড়িতে বসে হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।
বিপদে-আপদে একসঙ্গে থাকবেন সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তেমন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় নবদম্পতিকে।
পরদিন মঙ্গলবার নববধূকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন শিবকুমার। এরই মধ্যে ওই এলাকায় শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর স্রোত বেড়ে যায়। নববধূর হাতে হাত রেখে শিবকুমার ঘাটে পৌঁছালে মাঝি জানায়, এই খরস্রোতে নৌকা টানা অসম্ভব। কিন্তু নবদম্পতির তো ফেরার উপায় নেই! সদ্য বিবাহিত শিবকুমার তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, স্ত্রীকে কাঁধে নিয়েই নদী পার হবেন!
স্ত্রীকে কাঁধে তুলে স্রোত ভেঙে এগোতে লাগলেন শিবকুমার। লক্ষ্য, পার হওয়ার মতো জায়গা খুঁজে বার করা। তখনও পরনে বিয়ের শেরোয়ানি। পায়ে নতুন জুতা। নতুন বউ সুনীতার পরনে বিয়ের জোড়া।
হাতবোঝাই চুড়ি ঝুনঝুন করছে চলার তালে তালে। তিনি আর বাধা দেবেন কী! এভাবে চলতে চলতে চলতে শেষে মিলল নদীর তীর। সেখানে এক কিলোমিটার চওড়া নদীর স্রোতও তুলনায় কম। সেই পানি ঠেলে একসময় তারা গিয়ে ওঠেন বাড়ির কাছে। হইহই করে ওঠে আগে থেকেই খবর পেয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন।
নদীর বিপদের কথা শিবকুমারের অজানা ছিল না। তিনি বলেন, ‘নদীর গতিপ্রকৃতি ভালো না। কখন কী হবে, কেউ জানে না।’ এ কথা জেনেও স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে পার হলেন কেন? জবাবে সলজ্জ হাসেন নতুন বর। বরযাত্রীরা তখন বলে ওঠেন, ‘ছেলে তো বিয়ের পর প্রথমদিনই বাজিমাত করে দিল!
লাজুক হাসি তখন সুনীতার মুখেও। পারলেন কী করে এতটা পথ নতুন বউকে কাঁধে করে নিয়ে আসতে? স্রোত ভেঙে হাঁটতে অসুবিধা হলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে শিবকুমারের মুখে হাল্কা হাসি। ২৬ বছর বয়সী শিবকুমার বলেন, ‘লজ্জা লাগছিল। কিন্তু উপায় তো ছিল না। পানির স্রোত বাড়ছে দেখে মাঝি না করে দিল। আমরা কি তাহলে নদী পেরিয়ে বাড়ি যাব না!