সামরিক অভ্যুত্থানের পাঁচ দিন পর গণতন্ত্রের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হলো মিয়ানমারে। ইয়াঙ্গুনের রাজপথে গতকাল শনিবারের এই বিক্ষোভে এক হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেয়।
বিক্ষোভ থেকে স্লোগান আসে, সামরিক স্বৈরশাসন নিপাত যাক, গণতন্ত্রের জয় হোক’। বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে ছিল সু চিসহ অন্য নেতাদের মুক্তির দাবিও। যদিও এই বিক্ষোভের আগে দেশটিতে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেয় সামরিক সরকার।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের প্রতি জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। তারা বলেছে, কোনোভাবেই যেন প্রতিবাদকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো না হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, তাঁদের একজন প্রতিনিধি অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে প্রথমবারের মতো যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপড়েন চলছিল। এর মধ্যে গত সোমবার ভোরে রাজধানী নেপিডোতে অভিযান চালিয়ে স্টেট কাউন্সেলর সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির এনএলডি শীর্ষ নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনী। পরে সু চি ও উইন মিন্টের বিরুদ্ধে পৃথক মামলাও হয়। ওই দুই মামলায় গত বুধবার দুজনকেই রিমান্ডে নেওয়া হয়।
দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ হয়েছে। তবে ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটির পার্শ্ববর্তী এলাকায় গতকালের বিক্ষোভ মিছিলটি ছিল কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের পরনে ছিল লাল রঙের পোশাক।
অনেকের মাথায় বাঁধা ছিল লাল ফিতা। এই লাল রং এনএলডির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ঘটনাস্থলে থাকা সংবাদকর্মীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ার সময় হাতের তিন আঙুল উঁচিয়ে ধরছিল। এই তিন আঙুলকে বিক্ষোভকারীরা সামরিক সরকারের বিরোধিতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইয়াঙ্গুনের পাশাপাশি মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গতকাল বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে।
বিক্ষোভ যেন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সব চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছে সামরিক বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে গতকাল দেশজুড়ে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেয় তারা। এর আগে বন্ধ করে দেয় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপও।
বহুজাতিক টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি টেলিনর জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে প্রবেশ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
সোমবারের পর থেকে সু চিকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছে, ধোঁয়াশা রয়েছে তা নিয়েও। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দুই নেতাকে নিজ নিজ বাড়িতেই বন্দি করে রাখা হয়েছে। দুজনই রিমান্ডে আছেন। রিমান্ড শেষ হওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) গতকাল এক বিবৃতিতে বলে, মিয়ানমারের জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার রয়েছে। এ অধিকারের প্রতি যেন পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করা হয় তা সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই যেন দমন-পীড়ন চালানো না হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার জানিয়েছেন, তাঁদের একজন বিশেষ দূত সামরিক সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। গুতেরেসের তথ্য অনুযায়ী, ওই নারীদূতের সঙ্গে মিয়ানমারের ডেপুটি মিলিটারি কমান্ডারের আলাপ হয়েছে।
আলাপকালে ওই দূত আহ্বান জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী যাতে অবিলম্বে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। গুতেরেস বলেন, সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে সব চেষ্টাই চলছে।