গালওয়ানে সেনা সংঘর্ষের পর যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরেছে চীন-ভারত। উচ্চ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে লাদাখ থেকে সেনা সরাতে রাজি হয়েছে উভয় দেশ। তবে লাদাখ থেকে সেনা সরালেও নতুন করে আকসাই চীন ও তিব্বতে সামরিক অবকাঠামো তৈরি করতে শুরু করেছে ড্রাগন সেনারা। এতে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের কপালে।
লাদাখ সংলগ্ন ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ আকসাই চীনে বিপুল সংখ্যক লাল ফৌজ মোতায়েন করেছে চীন। জবাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আরো শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করেছে ভারত, এছাড়া দৌলত বেগ ওল্ডিতে বিধ্বংসী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক নামিয়েছে ভারতীয় বাহিনী।
গোগরা হট স্প্রিং, প্যাংগং লেকের উত্তরে পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকা ও অন্যদিকে দেপসাং সমতলভূমিতে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে চীনের সেনারা। অন্যদিকে আকসাই চীনে তৈরি হচ্ছে সামরিক অবকাঠামো। এই বিতর্কিত ভূখণ্ড সংলগ্ন দৌলত বেগ ওল্ডিতেই টি-৯০ ট্যাঙ্ক মোতায়েন করছে ভারত। আরো চার হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে ওই এলাকায়।
ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়তে চায়, তাহলে জবাব দেবে ভারতের বাহিনী। রাশিয়ার থেকে কেনা টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক পৃথিবীর শক্তিশালী যুদ্ধট্যাঙ্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিপক্ষের সামরিক অবকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই ট্যাঙ্ক।
কারাকোরাম পাসের দক্ষিণে চিপ-চাপ নদী উপত্যকা বরাবর রয়েছে দৌলত বেগ ওল্ডি। গালওয়ান উপত্যকার উত্তরে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় এই ভূখণ্ডে ভারতীয় সেনার বিমানঘাঁটি রয়েছে। এই দৌলত বেগ ওল্ডির কাছেই রয়েছে দেপসাং সমতলভূমি যেদিকে এগিয়ে এসেছে চীনের সেনারা। দৌলত বেগ ওল্ডির কাছে চীনা যুদ্ধবিমান নিয়মিত ঘোরাঘুরি করছে।
সেনা সূত্র জানাচ্ছে, দারবুক-শায়ক-ডিবিও ব্রিজ ধরে একেবারে সমস্ত টি-৯০ ট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই গত মাস থেকেই একটু একটু করে যুদ্ধট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছিল ভারতের সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গেই এম৭৭৭ ১৫৫ এমএম হাউইৎজার কামান মোতায়েনের কাজও শুরু হয়েছিল। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি স্পর্শকাতর কারাকোরাম পাস দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করতে পারে এমন সম্ভাবনা আগেই ছিল। তাই গোটা পরিকল্পনা আগে থেকেই ছকে রেখেছিল ভারতীয় বাহিনী।
টি-৯০ ট্যাঙ্ক টি৭২বি-এর আপডেটেড ভ্যারিয়ান্ট হল টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক। ৪৮ টন ওজনের এই ট্যাঙ্কে রয়েছে সেমি-অটোমেটিক লেজার বিম-রাইডিং গাইডেন্স। এর পাল্লা ১০০ মিটার থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর টার্গেট পয়েন্টে যদি শত্রুপক্ষের হেলিকপ্টারও চলে আসে, তাহলে তাকেও নির্ভুল নিশানায় আঘাত করতে পারে টি-৯০ ভীষ্ম।
অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট হেভি মেশিনগানও লাগানো আছে এই ট্যাঙ্কে। এই মেশিনগান অপারেট করতে পারেন কম্যান্ডার। এর পাল্লা কম করেও ২ কিলোমিটার এবং সাইক্লিক অর্ডারে ঘুরিয়ে প্রতি মিনিটে ৭০০-৮০০ রাউন্ড গুলি চালানো যায়। ভারতীয় প্রযুক্তিতে আপডেট করা টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্কে রয়েছে অটোমেটিক লোডার। অর্থাৎ এই ট্যাঙ্ক বেশিটাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালানো সম্ভব। দিনে ও রাতে আবহাওয়ার যে কোনো পরিস্থিতিতে এই ট্যাঙ্ক কাজ করতে সক্ষম। যে কোনো পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায় এই ট্যাঙ্ক থেকে।