সারাবিশ্বে প্রাণঘাতি করোনার তাণ্ডব থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রায় ১১ লাখ মানুষ এই মারণ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন। আর মৃতের সংখ্যা পেরিয়েছে ৫৮ হাজারের সীমা। বৃহস্পতিবার শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বের অন্য কোনও দেশে ঘটেনি। দাবানলের গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বেলজিয়াম, ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স এবং স্পেনেও।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, শুক্রবার পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১,১০০ জন। মার্কিন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর (এফইএমএ) ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর কাছে মৃতদেহ রাখার ১ লক্ষ ব্যাগ চেয়ে চাহিদা পত্র পাঠিয়েছেন। আমেরিকাকে অর্থনৈতিক দিক দিয়েও কাবু করে ফেলেছে করোনা। গত মার্চের শেষ দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ বেকারত্ব ভাতার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন। মার্চ মাসে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ। ২০০৯ সালের মার্চ মাসের পর এত খারাপ অবস্থা হয়নি। করোনার জেরে ইউরোপে গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু ঘটেছে স্পেন এবং ব্রিটেনে। যথাক্রমে ৯৫০ এবং ৬৮৪। সারাবিশ্বের মোট মৃত্যুর অর্ধেকই ঘটেছে স্পেন এবং ইতালিতে। এখনও পর্যন্ত স্পেনে ১১ হাজার এবং ইতালিতে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ করোনার ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন । তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই দুই দেশে সংক্রমণের তীব্রতা ধীরে ধীরে কমছে। অন্যদিকে ফ্রান্সে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪৭১ জনের। তবে আধিকারিকদের দাবি, এই পরিসংখ্যান শুধু হাসপাতালগুলি থেকেই পাওয়া গিয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে সবাইকে ছাপিয়ে জায়গা করে নিয়েছে জার্মানি। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৭ হাজার। মৃত্যুর সংখ্যাও এক লাফে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৩৮ জন।
এদিকে, জ্বর না কমায় আইসোলেশনে থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি আরও জানিয়েছেন, যাতে প্রতিদিন আরও বেশি করোনা পরীক্ষা করা যায় সেই পরিকাঠামো শীঘ্রই গড়ে দেবে সরকার। এদিনই সেখানে ৪ হাজার শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল খোলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়াতেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সবেতন কর্মহীন দিবসের মেয়াদ বাড়িয়ে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত করে দিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেদেশে ৬২৪ জন নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ইরানে এখনও পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৫১৩ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ জনের। করোনা প্রতিরোধে আগামী মঙ্গলবার থেকে একমাস দেশজুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করতে চলেছে সিঙ্গাপুর। চীনে আজ, শনিবার মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হবে। সমস্ত সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা। এদিনও নতুন করে ৩১ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলার কথা জানিয়েছে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন।
সর্বশেষ বিশ্ব মোট আক্রান্তের সংখ্য ১০ লাখ ৮৪ হাজার ১৫ জন।মৃত্যু হয়েছে ৫৮ হাজার ১৫৫ জনের।
সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৫০ জন।