বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের যে কোন বৃহৎ আকারের রকেট এণ্ড স্পেস ডেলিভারী সিস্টেমের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস-এক্সের ফ্যালকন-হেভী অত্যন্ত শক্তিশালী রকেট এবং স্পেস হেভী লিফট লঞ্চ ভেহিকল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আসলে অত্যন্ত শক্তিশালী ফ্যালকন-হেভী রকেট সিস্টেমের তিনটি কোরে প্রতিটিতে ৯টি করে মোট ২৭টি সুপার এডভান্স ইঞ্জিন একত্রে উৎপন্ন করে ২২,৮১৯ কিলোনিউটন বল। যেটি কিনা ৫ মিলিয়ন পাউণ্ডের চেয়েও বেশি। আর উৎক্ষেপণের সময় ফ্যালকন-হেভীর উৎপন্ন বলকে ১৮টি ৭৪৭ বোয়িং জেট পরিবহণ বিমানের সমন্বিত বলের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এখানে ভরের হিসেবটা এভাবে করা যেতে পারে যে, যাত্রী ও মালামালে পরিপূর্ণ একটি সম্পূর্ণ ৭৪৭ বোয়িং পরিবহণ বিমান লো আর্থ অরবিটে নিয়ে যেতে পারবে ফ্যালকন হেভী। স্পেস-এক্সের ফ্যালকন-হেভী রকেট ডেলিভারি সিস্টেমের উচ্চতা ৭০ মিটার, ডায়ামিটার ৩.৬৬ মিটার এবং প্রস্থ ১২.২ মিটার। দুই স্টেজের এই রকেট এণ্ড স্পেস ডেলিভারী সিস্তেমের এটির ভর ১৪,২০,৭৮৮ কেজি। আসলে এলান মাক্সের স্পেস-এক্স ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ তে ফ্যালকন হেভির প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন করা হয় এবং দ্বিতীয় ফ্যালকন হেভি লঞ্চটি সম্পন্ন করা হয় ১১ এপ্রিল ২০১৯ সালে। ফ্যালকন-হেভীর তিনটি বুস্টার রকেটকে লঞ্চ পরবর্তী সাফল্যের সাথে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। ফ্যালকন-হেভীর সাথে তুলনা করা যায় কেবল কোল্ড ওয়ার যুগের মার্কিন সার্টান-৫ হেভী রকেট সিস্টেমের সাথে। যা কিনা ১৯৭৩ সালে একবারই এর চেয়ে বেশি ভার নিয়ে মহাকাশে উড়াল দিয়েছিল। কিন্তু এর খরচ এতটাই বেশি ছিল যে তারপর আর কোন দিনই এমন ব্যয়বহুল রকেট সিস্টেম আকাশে পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফ্যালকন-হেভীর উড্ডয়নের খরচের হিসেব বিবেচনা করলে এটি একবারের যাত্রা বাবদ খরচ পড়ে ৯০.০০ মিলিয়ন ডলার এবং কেজি প্রতি খরচ পড়ে ১,৪০০ ডলার। ফ্যালকন-হেভী পৃথিবী থেকে লো আর্থ অরবিটে ৬৩,৮০০ কেজি ওজনের লোড ও জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিটে ২৬,৭০০ কেজি লোড নিয়ে যেতে সক্ষম। আবার রক্তিম মঙ্গল গ্রহে এটি ১৬,৮০০ কেজি এবং প্লুটো গ্রহে ৩,৫০০ কেজি পর্যন্ত লোড বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম বলে জানিয়েছে স্পেস এক্সের এক্সপার্টরা। তাছাড়া রাশিয়ার সয়ুজ-২ হেভী অরবিটাল ক্যারিয়ার রকেট লো আর্থ অরবিটে সর্বোচ্চ ৮,২০০ কেজি পর্যন্ত লোড নিয়ে যেতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৃথিবী থেকে রসদ এবং নভোচারী আন নেওয়ার কাজটি এখনো পর্যন্ত সফলতার সাথে করে যাচ্ছে রাশিয়ান সয়ুজ-২ স্পেস রকেট এণ্ড ডেলিভারী ভেহিকল সিস্টেম।
সিরাজুর রহমান