একুশ শতকের ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ জনে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ২১ লাখ ৮২ হাজার ১৯৭ জন। তাদের মধ্যে বর্তমানে ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৪১৪ জন চিকিৎসাধীন এবং ৫৭ হাজার ৩৭০ জন (৪ শতাংশ) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।
এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং এক লাখ ৪৫ হাজার ৫২১ জন রোগী মারা গেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরের চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ জনের মৃত্যু হলো।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে দুই হাজার ১৩৫টি। পরীক্ষা করা হয়েছে দুই হাজার ১৯টি। আর রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩৪১ জন। সব মিলিয়ে রোগী শনাক্ত এক হাজার ৫৭২ জন।
করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্ত দেখল বিশ্ব। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৮৫ হাজার। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। করোনাভাইরাসে রীতিমতো বিধ্বস্ত দেশটি।
প্রতিদিনই মৃত্যুর নতুন রেকর্ড গড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ২৪৮২ জন। যা আগের দিন ছিল ২৪০৭। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করে ফেলেছে।
চলতি মাসেই কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে কড়াকড়ি শিথিল করার কথাও ভাবছেন তিনি।
ইউরোপের দেশগুলোয়ও করোনার দাপট কমেনি। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ফ্রান্স ও জার্মানি। এশিয়ায় জাপান ও সিঙ্গাপুরে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে।
সিঙ্গাপুরে একদিনে ৪৪৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬ জনই বাংলাদেশি। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৮০ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮৬ জন।
এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৩ জন। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৮৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৪৯ জন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন নিউইয়র্কে। এ অঙ্গরাজ্যে একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭৮৬ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৪২ জন।
আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখেরও বেশি মানুষ। এরপর নিউ জার্সিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৮৩৪ জন, মারা গেছেন ২ হাজার ৮০৫ জন। এদিন আক্রান্তের সংখ্যায় মিশিগানকে টপকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ম্যাসাচুসেটস।
এ অঙ্গরাজ্যটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজারের বেশি, মারা গেছেন ৮৪৪ জন।
মিশিগানে ২৫ হাজার আক্রান্ত ও ১ হাজার ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করে ফেলেছে।
চলতি মাসে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে কড়াকড়ি শিথিল করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বুধবার হোয়াইট হাউসে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প জানান, গভর্নরদের সঙ্গে আলোচনা শেষে অঙ্গরাজ্যগুলোর কর্মকাণ্ড চালুর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই।
হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমরা সংক্রমণের শীর্ষ পর্যায় পার করেছি। আশা করছি, এটি অব্যাহত থাকবে এবং আমরা দুর্দান্ত অগ্রগতি অব্যাহত রাখব।
সাংবাদিকরা জানতে চান- কেন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর হার বেশি? জবাবে ট্রাম্প বলেন, অন্য দেশগুলো মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এ সময় তিনি চীনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ওরা মৃত্যুর সংখ্যা যা বলেছে, তা কি কেউ বিশ্বাস করবে?
সাংবাদিকরা জানতে চান লকডাউন শিথিল করলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে কি না- জবাবে ট্রাম্প বলেন, এটি বন্ধ রাখার সঙ্গেও মৃত্যু জড়িয়ে আছে।
স্পেনের ২৭ হাজার চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত : স্পেনের ২৭ হাজারেরও বেশি চিকিৎসাকর্মীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জরুরি সমন্বয় কেন্দ্রের পরিচালক ফার্নান্দো সাইমন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মহামারী মোকাবেলা করতে গিয়ে বহুসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।
এদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে আবারও কাজে যোগ দিয়েছেন। এদিকে স্পেনে লকডাউন শিথিলের পর আক্রান্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১৬ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৯ হাজার ১৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫৫৭ জনের।
সিঙ্গাপুরে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত : সিঙ্গাপুরে বুধবার একদিনে ৪৪৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে ২৫৬ জনই প্রবাসী বাংলাদেশি।
এ নিয়ে সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৯ জন। নতুন আক্রান্তের ৪০৪ জন আগের বিভিন্ন ক্লাস্টারের। আক্রান্তদের মধ্যে ৪০৪ জনই প্রবাসী শ্রমিক; যারা ডরমিটোরিতে বসবাস করেন।
ফ্রান্সের বিমানবাহী রণতরীর ৬৬৮ নাবিক আক্রান্ত : ফ্রান্সের রণতরী চার্লস ডি গলের ৬৬৮ নাবিকের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। রণতরীটিতে মোট ১ হাজার ৭৬৭ জন নাবিক রয়েছেন। আক্রান্তদের সবার দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে।
এ ছাড়া রণতরীটিকে এসকর্ট দেয়া অন্যান্য নৌযানের ক্রুদেরও করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তদের মধ্যে ৩১ জন নাবিককে দেশটির টুলন নামক এলাকায় সেন্ট আন্নে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে রেকর্ড ১৪৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১৭ হাজার ১৬৭ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৩ জন।
জাপানে আক্রান্ত ৯ হাজার ছাড়িয়েছে : জাপানে নতুন করে আরও প্রায় ৫শ’ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, নতুন করে আরও ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
ফলে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ২৯৪। এর মধ্যে ৭১২ জন ওই দেশে নোঙর করা ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরীর। এখন পর্যন্ত জাপানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৭৮ জন। এর মধ্যে ১২ জন ডায়মন্ড প্রিন্সেসের।
ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব : যুক্তরাজ্যের শীর্ষ মহামারী বিশেষজ্ঞ নীল ফার্গুসন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। ব্রিটেনে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৬১ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১২ হাজার ৭৬৮ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮ হাজার ৪৭৬ জন।
জার্মানিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু : জার্মানিতে প্রথমবারের মতো ২৪ ঘণ্টায় তিন শতাধিক করোনায় আক্রান্ত মানুষ মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৭ জন। বুধবার একদিনে ৩১৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৩ জন। এদিকে করোনা প্রতিরোধে মানুষের চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে আগামী ৩ মে থেকে তা প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করছে জার্মান সরকার।
ইতালির ‘সুখবর’ : ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর মিছিলে শামিল হয়েছেন আরও ৫৭৮ জন। তবে, এতেও আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকরা। কারণ এর আগের দিনের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত- দুটির হারই কমেছে সেখানে।
১৩ মার্চ থেকে ইতালিতে নতুন রোগী শনাক্তের হার কমতির দিকে। তবে মৃত্যুসংখ্যার দিক থেকে এখনও তেমন সুসংবাদ আসেনি। দেশটিতে মোট মৃত্যু ২২ হাজার ১৭০, মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪১ জন।