বীরভূম জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মিরাটিতে সোমবার সন্ধ্যায় নেমে এলো শোকের ছায়া। প্রণব মুখার্জি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং রাশভারী নেতা হলেও, এই গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন পল্টুদা, কাকাবাবু বা মামাবাবু।
প্রণব বাবুর মৃত্যুর খবর জানান তাঁর পুত্র অভিজিৎ মুখার্জি। তার পরে টেলিভিশন চ্যানেলে একটাই ব্রেকিং নিউজ- প্রণব বাবু আর নেই। আর তার কিছু সময় পরেই মিরাটির মুখার্জি ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকে হাজার হাজার মানুষ।
এই গ্রামেই বড় হয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। পড়েছিলেন কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাই স্কুলে। যদিও তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে; কিন্তু মিরাটির সাথে ছিল প্রণব মুখার্জির নাড়ির টান। তাই সুযোগ পেলেই চলে আসতেন নিজের গ্রামে। কাটিয়ে যেতেন কয়েকটা দিন।
মুখার্জি ভবনের দেখাশোনা করেন গৌতম সরকার। তিনি বলেন, সামনে দুর্গাপূজা … আমি গত ২৫ বছর এখানে আছি। প্রত্যেক পূজাতে আমি তাঁকে গ্রামে দেখেছি। এমনকি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখনও গ্রামে এসে নিজের হাতে পূজা করতেন।
মুখার্জি ভবনে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। প্রতিবছর এই দুর্গা দালানে গ্রামের সব মানুষের সাথে মিলিত হতেন প্রণব মুখার্জি। আর যে এমন দিন আসবে না, তা ভেবেই গ্রামের মানুষের মন খারাপ।
কাকাবাবুকে আমরা আর কোনো দিন পাব না… বিশ্বাস হচ্ছে না বললেন মুকুল ব্যানার্জি নামের প্রণব মুখার্জির এক আত্মীয়।
৯ আগস্ট রবিবার রাতে ১০ নম্বর রাজাজি মার্গের বাড়িতে বাথরুমে পড়ে যাওয়ার পর মিরাটির মানুষ কম চেষ্টা করেনি প্রণব মুখার্জির শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য। টানা দুই সপ্তাহ চলেছে পূজা আর যজ্ঞ।
কিন্তু কিছুই কাজে এলো না আমার মামাবাবু আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ডুকরে কেঁদে উঠলেন গ্রামের শিবমন্দিরের পুরোহিত।
মস্তিষ্কে রক্তজমাট ও চোখে আঘাত পাওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল প্রণব মুখার্জিকে। মস্তিষ্কে বেঁধে যাওয়া রক্ত বের করতে অস্ত্রোপচার করেছিলেন চিকিৎসকেরা; কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর আর জ্ঞান ফিরল না তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
বীরভূমের কংগ্রেস নেতা ডাক্তার সুশোভন ব্যানার্জি বলেন, এত বড় দেশ আমাদের… মিরাটি একটা ছোট্ট গ্রাম। কিন্তু এই গ্রামকে দেশ চিনেছিল প্রণব মুখার্জির জন্য। মীরাটির নক্ষত্র আজ চলে গেলেন। আমরা সবাই পিতৃহারা হলাম।