রোমানিয়ান তরুণীকে উত্তর লন্ডনের রাস্তায় জোর করে পতিতাবৃত্তি পেশায় নামিয়েছিলেন ভাইয়েরা। এই ঘটনায় গর্ভবতী হয়ে পড়েন ওই তরুণী। তরুণীর অভিযোগ ভাইয়েরা তাকে হুমকি দিয়েছিল যে, ‘এভাবে যদি সে অর্থ উপার্জন না করে তাহলে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হবে।
২০ বছর বয়সী ওই তরুণী কারখানায় কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্যে এসে প্রতারিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ এপিল তিনি লন্ডনে আসেন। দুই ভাই তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে প্লামস্টেডের একটি বাড়িতে নিয়ে যান, সেখানে আরো দু’জন রোমানিয়া মহিলা ছিল। তারা তার কাছ থেকে পাসপোর্ট ও ভ্রমণ সংক্রান্ত সব কাগজ ছিনিয়ে নেয়।
দিন সন্ধ্যায় তাকে কাজ করতে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। তাকে সেক্সি পোশাক পরতে বলা হয়েছিল এবং তাকে উত্তর লন্ডনের রাস্তায় নামানো হয়েছিল। এসময় তার হ্যান্ড ব্যাগে বেশ কিছু কনডম দিয়ে পতিতাবৃত্তি করতে বলা হয়।
তরুণীর অভিযোগ তিনি ভাইদের বলেছিলেন যে, তিনি আগে কখনো এই ধরণের কাজ করেননি, তাকে জানানো হয়েছিল যে তিনি শিখবেন। সে রাতে তাকে তার প্রথম খদ্দেরের সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে তিনি যদি তাদের জন্য কোনো অর্থোপার্জন না করেন তবে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হবে।
একবার তার খদ্দেরের কনডম ফেটে যায় এবং সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে।
সহিংসতার ভয় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে রাস্তায় যৌনকর্মী হিসাবে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তরুণী জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন খদ্দেরের সাথে ঘুমাতে বাধ্য হন, কখনো কখনো দিনে এক হাজার ইউরো পর্যন্ত উপার্জন করেছেন যার পুরোটাই তুলে দিতে হয়েছে ভাইদের হাতে।
পিঠে লাঠিপেটা করে ভাইয়েরা। এছাড়া অপহরণকারীরা তাকে নিয়মিত মারধর করে এবং নির্যাতন করত। তাকে কখনই নিজের থেকে বাসা ছাড়তে দেওয়া হয়নি এবং সর্বদা তার সাথে কোনো না কোন ব্যক্তি ছিল।
যখন তিনি প্রায় সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন, তখন তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে বাচ্চাটি হয়তো মারা গেছে, কারণ সে আর নড়াচড়া করে না। এ সময় ভায়েরা তাকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেছিল।
খদ্দেরকে তার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিষয়গুলো জানিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পরে, অজানা লোকটি তাকে আবার দেখতে এল এবং একটি ছোট মোবাইল ফোন দিল যা তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে মোবাইলে তিনি রোমানিয়ায় পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন।
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ রোমানিয়ান কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্যের আধুনিক দাসত্ব এবং শিশু যৌন শোষণ ইউনিট (এমএসসিই) এর অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেছিল। তাকে সহায়তা করার জন্য দু’জন রোমানিয়ার কর্মকর্তাকে যুক্তরাজ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের সহায়তায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং অভিযুক্ত দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চলতি বছরের প্রথম দিকে আদালতে দুই ভাই তাদের দোষ স্বীকার করে। দু’জনকেই শুক্রবার (২৪ জুলাই) উলউইচ ক্রাউন কোর্টে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় ইলিক ডুমিট্রু নামের এক ভাইকে ১৫ বছর এবং ইওয়ান ডুমিট্রু নামের অপর ভাইকে ১৬ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।