রাশিয়ার তাস নিউজের তথ্যমতে, ভারত তার সাবমেরিন বহরে থাকা সভিয়েত আমলের নির্মিত প্রজেক্ট ৮৭৭ (কিলো-ক্লাস) সাবমেরিন আইএনএস ‘সিন্ধুবীর’ মিয়ানমার নৌ বাহিনির হাতে হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। মুলত চলতি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের পুরনো সাবমেরিন ‘সিন্ধুবীর’ সাবমেরিনটির আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা হয়েছিল। তাছাড়া মিয়ানমার নৌ বাহিনীর অফিসার এবং ক্রুদের সাবমেরিন পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে যে কোন সময় সাবমেরিনটিকে হস্তান্তর করা হতে পারে।
নিউজ মাধ্যমটির তথ্য অনুসারে, মিয়ানমার ভারতের এই ‘সিন্ধুবীর’ পুরনো আধুনিকায়নকৃত কিলো-ক্লাস সাবমেরিনটি ক্রয় করছে না লীজ নিচ্ছে এ সংক্রান্ত হস্তান্তরের চুক্তি এবং শর্তসমুহ একেবারেই অস্পষ্ট ছিল। এদিকে রাশিয়ার অস্ত্র রফতানিকারক সংস্থা রোসোবারোনেক্সপোর্ট এই চুক্তির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এমনো হতে পারে ভারত মিয়ানমারকে এই পুরনো ‘সিন্ধুভির’ সাবমেরিনটিকে একেবারেই বিনামূল্যে দিয়ে দিতে পারে।
আসলে সভিয়েত আমলের তৈরি ‘সিন্ধুবীর’ কিলো-ক্লাস সাবমেরিনটি ১৯৮৮ সালে ভারতের নৌ বাহিনীতে অন্তভুক্ত করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সেভেরোডভিনস্ক শীপইয়ার্ডে এটি আধুনিকায় এবং মাঝারি আকারের মেরামত সম্পন্ন করা হয়েছে। যদিও ভারতের ‘সিন্ধুবীর’ কিলো-ক্লাস সাবমেরিনটি মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করার পরও ভারতের নৌ বাহিনীতে আরও আটটি এডভান্স কিলো-ক্লাস সাবমেরিন সক্রিয় থাকবে।
তাসের তথ্যমতে, আগে রাশিয়া কিন্তু ভারতের তিনটি কিলো-ক্লাস সাবমেরিন আধুনিকায়নের পাশাপাশি রাশিয়ার নৌ বাহিনীর তিনটি আপগ্রেডেড সম জাতীয় কিলো-ক্লাস সাবমেরিন ক্রয়ের প্রস্তাব দেয় ভারতের কাছে।
কিলো-ক্লাস সাবমেরিন প্রথম ১৯৮০ সালে সভিয়েত আমলে সার্ভিসে আসে। এটি মুলত রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের রুবিন সেন্ট্রাল মেরিটাইম ডিজাইন ব্যুরো ডিজাইন করে। পরবর্তীতে সভিয়েত আমলে এটিকে ৮৭৭ প্রজেক্টের আওতায় ব্যাপক আধুনিকায়ন করে অ্যাডমিরাল্টি সেন্ট পিটার্সবার্গের শিপইয়ার্ডের সাবমেরিনগুলি নির্মান করা হয়েছিল। রাশিয়ার এই কিলো-ক্লস সাবমেরিনের ওজন ২,৩০০ টন এবং সারমার্জড অবস্থায় ৩,৯৫০ টন। সাবমার্জড অবস্থায় এর গতি প্রতি ঘন্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল এবং সারফেসে গতি ১৭ নটিক্যাল মাইল। এর রেঞ্জ এড়িয়া ৬,০০০ কিলোমিটার এবং এটি পানির ৩০০ মিটার গভীরে ৭০ দিন পর্যন্ত একটানা লুকিয়ে থাকতে সক্ষম।
অস্ত্র হিসেবে রাশিয়ার কিলো-ক্লাস সাবমেরিনে ৬টি ৫৩৩ এমএম টর্পেডো টিউব রয়েছে। এটি মোট ১৮টি হেভীওয়েট টর্পেডো বহন করে। যার মধ্যে ৬টি টর্পেডো টিউবে ইন্সটল করা থাকে এবং ১২টি অতিরিক্ত টর্পেডো সাবমেরিনের র্যাকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া এটি যুগৎপৎভাবে একই সাথে দুটি টার্গেটে টর্পেডো এনগেজড করতে সক্ষম। আবার এর টর্পেডো টিউব থেকে ২৪টি মাইন মোতায়েন করতে পারে। সাবমেরিনে ৮টি কোল্ড ইনফ্রেয়েড সীকার স্ট্রেলা-৩ মিসাইল কিংবা ইগলা ইনফ্রেয়েড গাইডেড সারফেস টু এয়ার মিসাইল বহন করে এবং এই মিসাইল ফায়ার করার জন্য একটি মিসাইল লাউঞ্চার রয়েছে। স্ট্রেলা-৩ মিসাইলের রেঞ্জ ৬ কিলোমিটার এবং এটি ২ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করে এবং ইগলা মিসাইলের রেঞ্জ ৫ কিলোমিটার এবং এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ১.৬৫ ম্যাক।
তবে ভারতীয় নৌ বাহিনীর বিশেষ চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই কিলো-ক্লাস সাবমেরিনে নভোতার-৩ এম-৫৪ই১ এন্টিশীপ ক্রুজ মিসাইল ইন্সটল করা হয়েছে। যার রেঞ্জ ২২০ কিলোমিটার এবং এটি ৪৫০ কেজি ওজনের হাই এক্সপ্লুসিভ ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। তাছাড়া এই সাবমেরিনে নভোতর-৩ এম-১৪ ল্যাণ্ড এট্যাক ক্রুজ মিসাইল বহন করে। যার রেঞ্জ ২৭৫ কিলোমিটার এবং এটি ৪৯৯ কেজি ওজনের এক্সপ্লুসিভ ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
কাউন্টারমেজার হিসেবে কিলো-ক্লাস সাবমেরিনে ইলেক্ট্রিক সাপোর্ট মেজারস (ইএসএম), এ রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার এণ্ড ডাইরেকশন ফাইণ্ডার ডিভাইস ইন্সটল করে হয়েছে। সোনার সিস্টেম হিসেবে এটিতে এমজিকে-৪০০ সোনার লাগানো রয়েছে।
তাছাড়া সাবমেরিনটি ২টি ১,০০০ কিলোওয়াট জেনারেটর এবং একটি ৫.৫০০ হর্স পাওয়ার শক্তি সক্ষমতা সম্পন্ন প্রপুলশন মোটরসহ ডিজেল ইলেক্ট্রিক প্রপুলশন দ্বারা চালিত। তাছাড়া এটিতে ১৯০ হর্স পাওয়ারের একটি ইকনোমী মোটর ও দুটি ১০২ হর্স পাওয়ারের স্ট্যাণ্ডবাই প্রপুলশন সিস্টেম এবং সাতটি ব্লেডের ফিক্সড-পিচ প্রোপেলার লাগানো রয়েছে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশে। sherazbd@gmail.com