প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অধিকাংশ বাংলাদেশির পছন্দ জো বাইডেন। ডেমোক্রেটিক দলের এই প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত জো বাইডেন অত্যন্ত পরিচিত মুখ। অনেক দিন ধরে সিনেটর ছিলেন; ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে।
ইদানীং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
সাধারণত বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের বেশির ভাগের সমর্থন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি প্রায় একচেটিয়া ছিল। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করলেও আগামী ৩ নভেম্বর হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রতিই আস্থা বেশির ভাগ বাংলাদেশির।
নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় টেলিভিশন টিবিএন২৪-এর একটি জরিপও সেটা নিশ্চিত করেছে। জরিপে অংশ নেওয়া দর্শকদের ৫৯ শতাংশই জো বাইডেনকে সমর্থন করেছেন। বাইডেনের চেয়ে অনেকটা কম হলেও, ট্রাম্পের অবস্থান বাংলাদেশিদের মধ্যে ভালো হয়েছে; যা ৪১ শতাংশ।
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, জো বাইডেনের প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন হয়তো আরো বেশি হবে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিজ্ঞানের প্রতি অবজ্ঞার প্রসঙ্গটি টেনে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আলাবামার ডিজিটাল জার্নালিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, দায়িত্বহীন আচরণের কারণে প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন; দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সেই সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট যেভাবে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে শোভাযাত্রা করেছেন, হোয়াইট হাউসে ফিরে মাস্ক খুলে ফেলেছেন, সেটা একেবারেই কাম্য ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট অনেককে ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
হয়তো জো বাইডেন অত্যন্ত ক্যারিসমেটিক কোনো প্রার্থী নন। এর পরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল। সেই সঙ্গে তিনি রাজনীতিতে অভিজ্ঞ, অভিবাসীবান্ধব। রাজনৈতিক আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি, মানুষ ও আইনের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কারণেও তিনি অন্য রকম।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসের সিইও মোহাম্মদ মালেক দৈনিক কালের কণ্ঠকে বলেন, দেখুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্যই অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ভালো ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সেটা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাজের ধারাবাহিকতায় এসেছে। ওবামা যাওয়ার সময় একটি শক্তিশালী অর্থনীতি রেখে গেছেন। সেই সুবিধা পেয়েছেন ট্রাম্প।
মোহাম্মদ মালেক আরো বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি বর্ণবাদ ও বৈষম্যমূলক আচরণকে খুবই অপছন্দ করি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনীতিতে এই বিষয়টি প্রকট। তিনি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন ও প্রশ্রয় দেন। যা জো বাইডেনের মধ্যে নেই। ফলে প্রার্থী হিসেবে আমি তাঁকেই এগিয়ে রাখছি।
যদিও নিউ ইয়র্কে গড়ে ওঠা বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান এলায়েন্সের চেয়ারম্যান নাসির আলী খান পল বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি একজন অভিবাসী হিসেবে নয়; আমেরিকান হিসেবে পুরো বিষয়টিকে দেখতে চাই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক একজন মানুষ। দেশের স্বার্থকে তিনি সবার ওপরে স্থান দিয়েছেন। আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে যে আমেরিকায় রেখে যাব, সেটিকে বাসযোগ্য করে তুলছেন তিনি। এ কারণে তাঁকে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রয়োজন।
‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে কোনো যুদ্ধে জড়াননি; বরং যুদ্ধ বন্ধ করেছেন’, মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমনকি অনেকেই বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাবে। তেমনটি তো হয়নি। একজন প্রথাগত রাজনীতিবিদ না হয়েও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক সাফল্যে ওই অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করছে।
তবে ড. দেলোয়ার বলেছেন, দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন সবার কাছে আদর্শ ব্যক্তিত্ব। সবাই তাঁকে অনুসরণ করবে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তিনি অনুকরণীয় আচরণ করেননি। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, পরপর দুই বছর প্রেসিডেন্ট ৭৫০ ডলার করে ট্যাক্স দিয়েছেন। তিনি হয়তো অবৈধ কিছু করেননি। কিন্তু আইনের ফাঁকের আশ্রয় নিয়েছেন। সেটা কারো কাছেই কাম্য ছিল না।
অন্যদিকে বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান অ্যালায়েন্সের কো চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ সরকার দাবি করেছেন, প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিলেন; তা বাস্তবায়ন করেছেন। ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা ভালো আছে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে চাকরির বাজার ফিরেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দেননি, এ কথা মানতে রাজি নন বিদ্যুৎ সরকার। বরং ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত স্টেটগুলোর গভর্নর ও মেয়রদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব কিছু করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই ভাইরাস তো কোনো সীমানা চেনে না। ফলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড শক্ত। তাই তিনি করোনাকে জয় করেছেন।
নিবন্ধিত রিপাবলিকান নাসির আলী খান পল এ প্রসঙ্গে দাবি করেছেন, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে বড়সংখ্যক মানুষের মাস্ক ব্যবহার না করা এবং লুটপাটের ঘটনায় দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। এতে প্রেসিডেন্টের কিছুই করার ছিল না।
রাজনীতি বিশ্লেষক মোহাম্মদ মালেক বলেন, দুজন প্রার্থীকে যদি পাশাপাশি দাঁড় করান, তাহলে আমার কাছে জো বাইডেন অনেক বেশি মানবিক। ভোটের মাঠেও তিনিই এগিয়ে আছেন বলে মনে করি। এর পরও শেষ কথা বলবে জনগণ। গোটা আমেরিকায় ভোটাররা কার প্রতি তাদের সমর্থন জানাবে, সেটা দেখার জন্য আমাদেরকে মাসখানেক অপেক্ষা তো করতেই হবে।