কভিড মোকাবেলায় এক বিরল নজির তৈরি করেছে ভারতের লাক্ষাদ্বীপ। দেশটিতে যখন প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, তখন এই ভারতের এই অংশ একেবারে করোনা শূন্য। এখনো পর্যন্ত একজনও করোনা আক্রান্তের সন্ধান সেখানে পাওয়া যায়নি।
লাক্ষাদ্বীপের প্রায় ৭০ হাজার জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম, আর ওই অঞ্চলের একমাত্র এমপি মোহাম্মদ ফয়জল বলছেন, দ্বীপে বহিরাগতদের প্রবেশ আটকেই তাদের এই সাফল্য! ফয়জল বলেন, যখন জানুয়ারির শেষে কেরালায় প্রথম কভিড রোগীর সন্ধান মেলে, আমরা প্রথমেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আসা বন্ধ করে দিই। এমকি, এন্ট্রি পারমিট নিয়ে যারা এখানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে আসেন তাদের জন্যও লাক্ষাদ্বীপের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, পুলিশ এখানে কারফিউ বা ১৪৪ ধারাও খুব কঠোরভাবে বলবৎ করেছে, লোকজনও অযথা বাড়ির বাইরে বেরোননি।
৩৬টি দ্বীপকে নিয়ে গঠিত আরব সাগরে অবস্থিত ভারতের এই দ্বীপপুঞ্জটি। এই অঞ্চলটিতে একজনেরও শরীরে করোনা পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাকি দেশের তুলনায় অনেক আগে থেকে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপ করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই প্রত্যন্ত লাক্ষাদ্বীপ ভাইরাস ঠেকানোয় এই বিরল সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু ভারতের মুসলিম-প্রধান এই দ্বীপপুঞ্জ কিভাবে এতদিন কভিডমুক্ত থাকতে পারল?
যাদের জরুরি চিকিৎসা বা বিশেষ প্রয়োজনে মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়েছে তাদের জন্য কোচিতে আমরা দুটো কোয়ারেন্টিন সেন্টারও চালু করেছি – সেখান সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থেকে টেস্টে নেগেটিভ হলে তবেই তারা ফেরত আসার অনুমতি পেয়েছেন। আর দুবাই বা গাল্ফ কান্ট্রিগুলো থেকে লাক্ষাদ্বীপের যে স্থানীয়রা ফিরে এসেছেন তাদেরও কোচিতে দুসপ্তাহ ও দ্বীপে ফিরেও আরও দুসপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
দ্বীপের বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা হোটেলে থাকার খরচ প্রশাসন বহন করলেও নানা কড়াকড়ির কারণে পর্যটননির্ভর এই দ্বীপটির অর্থনীতি যে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে মোহাম্মদ ফয়জল অবশ্য তা অস্বীকার করছেন না। তিনি বলেন, লাক্ষাদ্বীপের উপার্জনে অবশ্যই বিরাট টান পড়েছে – সেই মার্চ থেকে আমাদের পর্যটন ব্যবসাও পুরোপুরি বন্ধ। তবে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে আমরা এখন স্থানীয় শিল্পগুলোর ওপরেই জোর দিচ্ছি। এখানকার দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নির্মাণ শিল্প বা মাছ ধরতে যাওয়া – এগুলোর ওপর আর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
লাক্ষাদ্বীপের সঙ্গে বাকি দেশের সংযোগের সূত্র হলো কোচি থেকে বিমানসেবা আর মোট সাতটি যাত্রীবাহী জাহাজের সার্ভিস। সেই যোগাযোগে অনেক আগে থেকে বিপুল কড়াকাড়ি আরোপ করেই লাক্ষাদ্বীপ আজ পর্যন্ত কভিডমুক্ত। তবে তার জন্য অর্থনীতিতে চড়া দামও দিতে হচ্ছে তাদের।