সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে বিক্ষোভ চলছে। সেনা অভ্যুত্থানে আটক নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে দেশটির রাজধানীতে জড়ো হয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হাজার হাজার মানুষ তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
কিন্তু আন্দোলন থামাতে বসে নেই মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করছে সেনা সরকার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানায়।
এক দশকেরও বেশি সময় পর দেশটিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ দেখছে মিয়ানমার। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলছে, তারা যদি জননিরাপত্তা বা ‘আইনের শাসন’কে হুমকি মুখের ফেলে দেয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। জালিয়াতির কোনো ধরনের প্রমাণ না দিয়েই সেনা প্রধান ক্ষমতা দখল করেন।
ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে। প্রথমদিন রাতেই হাড়ি-পাতিল পিটিয়ে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় দেশটির নাগরিকরা। এরপর প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সেনা শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নামে।
সোমবার সকালে ধর্মঘটের জন্য নেপিদোর রাস্তায় ১০ হাজার মানুষ জড়ো হয়। এ ছাড়াও দেশটির ম্যান্ডলে ও ইয়াংগুনের মতো অন্যান্য শহরগুলোতেও উল্লেখযোগ্য মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এই বিক্ষোভের মধ্যে শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সরকারি কর্মচারীরাও রয়েছেন।
সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক জোরালো হচ্ছে মিয়ানমারে। কাজে যোগ দিতে নারাজ শ্রমিকরা। বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হনিন থাজিন নামের ২৮ বছর বয়সী এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘আজ কর্মদিবস, কিন্তু যদি আমাদের বেতন কেটে রাখাও হয়, তবু আমরা কাজে যাচ্ছি না।’
এর আগে রবিবার মিয়ানমার তার ইতিহাসে যুগের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ দেখেছে। এর আগের দিন দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় যেন বিক্ষোভকারীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন। তবুও দমন করা যায়নি মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের।
গত নভেম্বর মাসে নিয়ানমারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। দেশটির শাসনভার নেন সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং। তার পরপরই মিয়ানমারে বছরব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
এদিকে, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে দেশটির নির্বাচন কমিশন বলছে, কারচুপির অভিযোগ দাবি করা হলেও কোনো ধরনের প্রমাণ দিতে পারেনি জান্ত সরকার।