সাম্প্রতিক শিরোনাম

আওয়ামী লীগই যেনো আওয়ামী লীগের কাঁটা হয়ে না দাঁড়ায়

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন “আওয়ামী লীগ” একটি অনুভূতির নাম। কিন্তু এ “অনুভূতি” যখন দুর্নীতিতে গিয়ে ঠেকে তখন আমরা যারা প্রকৃত আওয়ামী ঘরানার লোক তারা বেশ কষ্ট পাই, আহত হই। নীতির রাজাকে রাজনীতি বলা হলেও এখন আর সে তত্ত্ব কথার কোনো মূল্য নেই। বরং চুরি চামারি, টাউট বাটপারি, দুর্নীতি তথা তেলবাজিতে যে যতো বড়ো রাজা সে ততো বড়ো রাজনীতিবিদ, ততো বড়ো নেতা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সত্যিকারার্থে কোনো দলই এসবের উর্ধ্বে নয়। এমনকি প্রিয় দল আওয়ামী লীগও।
আমার ধারণা ছিলো রাজনীতিবিদদের এ নষ্টামি কেবল মাত্র আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ। দেশের বাইরে বসে যারা দেশীয় রাজনীতি করেন তারা অন্তত এ কলংকের চুনকালি মাখেননা। দেশ ও দলের প্রতি সত্যিকার ভালোবাসা থেকেই সম্ভবত তারা রাজনীতি করেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমার এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়। দেশের এ নষ্ট রাজনীতি এখন আর কেবল দেশেই নয় বরং তা দেশের দেয়াল পেড়িয়ে পাড়ি জমিয়েছে বিদেশেও। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর দিলেই তা উপলব্ধি করা যায়। এইতো কিছু দিন আগেও দৈনিক ইত্তেফাক সহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে এরকম একটি নিউজ প্রকাশিত হয়।
খবরটির সারমর্ম হচ্ছে, কয়েক মাস আগে ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের যে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় সেখানে বিএনপি জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্থানীয় নেতা কর্মীদের অভিযোগ। তাদের কারো সংগে আলোচনা বা শলাপরামর্শ না করেই তিনি এ কমিটি ঘোষণা করেন। এমনকি যে দুজনকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হয়েছে যথাক্রমে বেলাল হোসেন ও ইকবাল আহমেদ লিটন তারাও এ কমিটির নামের তালিকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। ফলে প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা হতাশ, হতবাক ও ক্ষুব্ধ। গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা অচিরেই এ বিতর্কিত কমিটি বাতিলের জোর দাবি জানান।
খবরটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের আগে থেকেই আমি জানতাম। আওয়ামী লীগের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে দলটির সব খবরই আমার কানে আসে। আমি প্রত্যক্ষ ভাবে দলের সাথে জড়িত নই বটে কিন্তু প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আমার সহযোগিতার কোনো কমতি ছিলো না। এখানো মনে পড়ে কিলারনীর ( Killarney ) একটি অনুষ্ঠানে আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা নিয়ে সর্ব প্রথম কথা বলি আমি, রফিক খান ( প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক), মোনায়েম খন্দকার রানা (প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি) ও ইনজামুল হক জুয়েল ( প্রতিষ্ঠাতা প্রচার সম্পাদক)। এরই ধারাবাহিকতায় মিটিং অনুষ্ঠিত হয় কর্ক (Cork) ও ওয়েক্সফোর্ডে (Wexford)। গঠিত হয় আহ্বায়ক কমিটি যেখানে আমারো সদস্য পদ ছিলো। পরবর্তীতে ২০১১ সালে লিমরিক সাউথ কোর্ট হোটেলে ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মিরাজ শিকদারকে সভাপতি ও মোনায়েম খন্দকার রানা কে সাধারণ সম্পাদক করে এক সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এ সম্মেলনে আমিও উপস্থিত হয়ে ছিলাম। কিন্তু জরুরী কারণ বশত সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই আমাকে বিদায় নিতে হয়। বিদায় বেলায় শ্রদ্ধেয় মিরাজ ভাই আমাকে কমিটিতে থাকার অনুরোধ জানালে আমি বিনয়ের সাথে আমার অপারগতার কথা প্রকাশ করি। এরপরো তিনি আমাকে না জানিয়েই বলতে গেলে অনেকটা গর্বভরে প্রধান উপদেষ্টা পদে রেখে দেন। মিরাজ ভাই সভাপতি থাকাকালীন পর্যন্ত দলটির সাথে আমার বেশ যোগাযোগ ছিলো। পরবর্তীতে খুব বেশি একটা যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারলেও আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কার কতোটুকু ভূমিকা রয়েছে, কে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, কে ত্যাগী নেতা তা আমার অজানা নয়। তাদের সবাইকে আমি চিনি। আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক তারাই। তাদেরকে বাদ দিয়ে যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তবে তা কখনো গ্রহণ যোগ্য ও দলের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারেনা।
এ অগ্রহণ ও অমঙ্গলজনক কাজটিই করেছেন আমাদের প্রিয় নেতা ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব নজরুল ইসলাম। একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ও বর্ণাঢ্য অতীতের অধিকারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি কিভাবে এমন কাঁচা কাজ করতে পারলেন তা আমার বোধগম্য নয়।
একটি দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে অথচ সেই দলের নেতা কর্মীরা জানবেনা কিংবা তাদের সাথে শলাপরামর্শ করা হবেনা তাতো হতে পারেনা। নজরুল ইসলাম সাহেব আয়ারল্যান্ডে বসবাস করেননা। তিনি থাকেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। আয়ারল্যান্ডে কে আওয়ামী লীগ করে কি করেনা দু একটা বিশেষ পরিচিত মুখ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে তার ধারণা থাকার কথা নয়। তাহলে সম্প্রতি তিনি যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করলেন তার নামের তালিকা কোথায় পেলেন, কিভাবে পেলেন, কার মাধ্যমে পেলেন? কে সেই মহারথী? 
তার গঠিত কমিটিতে বেশ কিছু সংখ্যক অখ্যাত অপরিচিত সদস্যের পাশাপাশি কয়েকজন বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীর নামও স্থান পেয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ। ওরা যে ইতোপূর্বে ওই রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলো তার বহুবিদ প্রমাণ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাতে রয়েছে। এদের কেউ কেউ “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনের নামে আয়ারল্যান্ডের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে সরকারের যে বিষোদগার ও কটূক্তি করেছে তার ভিডিও ক্লিপও নেতা কর্মীদের কাছে সংরক্ষিত আছে। এরা যে শুধু আয়ারল্যান্ডেই এ রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে তা নয় বরং পারিবারিক ভাবেই তারা এ রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পৃক্ত।
নজরুল ইসলাম সাহেব যে কেবল আয়ারল্যান্ডে এমনটি করেছেন তা নয়, তিনি যে দেশটিতে বসবাস করেন খোদ সে দেশের আওয়ামী লীগ কমিটি নিয়ে ও বিতর্ক রয়েছে। সেখানেও তিনি বিএনপি জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন বলে স্থানীয় নেতা কর্মীদের অভিযোগ। যা ইতোমধ্যে পত্র পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
সাঈদী মুক্তি পরিষদের এক নেতা যিনি অনবরত সরকারকে তিরস্কার করেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধীতা করে গরম গরম বক্তব্য রাখেন তাকেও স্পেন আওয়ামী লীগের সভাপতি করতে জনাব নজরুল ইসলাম মোটেও কুুণ্ঠিত হননি।
আমার প্রশ্ন, তিনি একজন পরীক্ষিত আওয়ামী লীগার বলেই দলের নীতি নির্ধারকরা তাকে ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি বানিয়েছেন। তার রক্ত, মাংস ও মগজে আওয়ামী ধারা প্রবহমান। তাহলে কেনো বিএনপি জামায়াতের প্রতি তার এতো দরদ উৎলে উঠবে? কেনো তার গঠন করা প্রতিটি কমিটিতে বিএনপি জামায়াত প্রীতির ছাপ থাকবে?
এ প্রস্ন শুধু আমার নয়, অনেকেরই। এ নিয়ে নেতা কর্মীদের মাঝে চলছে বেশ কানাঘুষা। বেশ মোটা অঙ্কের লেন দেন হয়েছে বলে একটি অনলাইন পোর্টালের দাবি।পোর্টালটির ভাষ্যনুযায়ী অনেক দিন যাবৎ বিএনপি জামায়াত ক্ষমতার বাইরে থাকায় ওরা দিশেহারা হয়ে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার জন্য আওয়ামী লীগে ঢুকে পয়সা দিয়ে পদ পদবি কিনে নিচ্ছে। এতে প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা নায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দলে দেখা দিচ্ছে দ্বিধা দ্বন্দ্ব বিভক্তি। মূল ধারার ত্যাগী রাজনীতিকরা সিটকে পড়ছেন দূরে। যা কিনা আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের জন্য মোটেও শুভকর নয়।
তাই আমি মনে করি নজরুল ইসলাম সাহেব যে বিতর্কিত কমিটি উপহার দিয়েছেন দলের স্বার্থে তা অতি সত্বর বাতিল ঘোষণা করে আয়ারল্যান্ডের সত্যিকার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতিতে এবং তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে একটি নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন।
এও মনে করি, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে তার নিজের স্বার্থে যেমন খোলাসা করা উচিত তেমনি দলের স্বার্থেও। কারণ আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ে এমন কারো থাকা সমীচীন নয় যিনি বা যারা স্বীয় স্বার্থের মোহে উদ্বেলিত হয়ে দলের বৃহৎ স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে মোটেও কুণ্ঠিত হননা। তাই আশা করি অতি সত্বর তিনি জনসমক্ষে তার ব্যপারে স্চ্ছ ধারণা তুলে ধরবেন।
তা করতে ব্যর্থ হলে আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক যারা ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের দেখভাল করেন তাদের কাছে জোর দাবি জানাই, তারা যেনো নজরুল ইসলামের উপর আঙ্গুলায়িত সকল অভিযোগের সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা নিরুপণে সচেষ্ট হন। অভিযোগ যদি সত্যি হয় তবে তাকে কেবল সভাপতি থেকে অব্যাহতি নয়, দল থেকে বহিষ্কার নয় বরং কৃত কর্মের জন্য যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় একদিন আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে খুরে খুরে খাবে, আওয়ামী লীগই আওয়ামীলীগের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।

লেখকঃ সাজেদুল চৌধুরী রুবেল,

আয়ারল্যান্ড প্রবাসী কলামিসট ও প্রাবন্ধ

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...