দেশের প্রথম কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের এক সপ্তাহের মাথায় সরকার গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে ।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুকি এবং দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্রনের বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে এ ছুটি কয়েকবার বর্ধিত করার মাধ্যমে তা এখনো চলমান রয়েছে। তবে করোনাকালীন শিক্ষার ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব করার প্রচেষ্টা হিসেবে সরকার বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে ক্লাস চালু রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এসব ডিভাইস নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক শিক্ষা বৈষম্য তৈরি করছে।
প্রত্যন্ত গ্রামের যেখানে বিদ্যুতের আলোই এখনো যাদের কাছে স্বপ্ন রয়ে গেছে তাদের কাছে ডিভাইস নির্ভর শিক্ষা অলৌকিক স্বপ্নই বটে। এ সংকটের ফলাফল হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার দ্বার প্রান্তে রয়েছে।
অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের পারিবারিক আর্থিক সংকটের আশু সামাধান হিসেবে সন্তানদের শিশু শ্রমের দিকে ধাবিত করছে। যা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের একটি অংশকে শিক্ষা দূরে রাখবে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ সংকটের বাহিরে নয়। দীর্ঘ সময়ের এ শিক্ষা সংকটের ফলে তারাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বড় ধরনের সেশনজটের আশংকায় রয়েছে। গত এক দশকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গত অর্ধ-দশকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট অনেকটা নিয়ন্রণে আসলেও চলমান শিক্ষা সংকট আবারও সেশনজটকে প্রকট আকার ধারণ করার পথকে সুযোগ করে দিবে।
যা করোনা পর্ববর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যত পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতে হলে ডিভাইস ভিত্তিক সুষম শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে সব শিক্ষার্থী এ সংকটে ঝরে পড়ার সম্ভাবনার দ্বার প্রান্তে রয়েছে সে সব শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের বিকল্প নেই। দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিভাইস ভিত্তিক সুষম শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ সংকটকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করা সম্ভব।
সে লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি অভিভাবক এবং সচেতন সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এসব পদক্ষেপ শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে সেশনজট ও অন্যান্য শিক্ষা সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব হবে।
মোঃ সুজন
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।