এমন দৃশ্য কি সচরাচর দেখা যায়? স্বয়ং ডিসি, ইউএনও রাস্তায় নেমে আধলা ইট তুলে বা সাদা রং দিয়ে নিজেই সুরক্ষাবৃত্ত এঁকে দিচ্ছেন। সব্জি বিক্রেতাদের বোঝাচ্ছেন, দূরত্ব বজায় রেখে চলাটাই মূল সতর্কতা।
তাঁর দেখানো পথে হেঁটে সক্রিয় দেশের পুলিশ- প্রশাসনও। শুধু শহরের বিভিন্ন বাজার নয়, জেলার বহু গ্রামের বাজারে দেখা গেছে, পুলিশই রাত জেগে নিজে হাতে দোকান-বাজারের সামনে লক্ষ্মণরেখা কেটে দিচ্ছে, এক মিটার দূরত্ব মেপে চক দিয়ে বৃত্ত এঁকে দিচ্ছে। কোথাও বা ভবঘুরে বা ফুটপাতবাসীকে হাত ধুইয়ে দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে!
একদিকে প্রচণ্ড ভয়ভীতি, অন্যদিকে নজিরবিহীন সচেতনতা। ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধের মুখে এখন গোটা দেশ। নেই রাজনীতি, নেই ধর্মের ভেদাভেদ, নেই একে অপরকে চাঁচাছোলা আক্রমণ। সবার লক্ষ্য যেন একটাই। যে যেভাবে পেরেছে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সঙ্কটের মোকাবিলায় সবাই যেন এক। যেভাবে হোক, ওই মারণ ভাইরাসকে তাড়াও।
যাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে একসুর, সেটা যদি এমন মারণ ভাইরাস না হতো, তাহলে এর মধ্যে অবশ্যই একটা অন্য তৃপ্তি থাকতো।
কিন্তু রোগের যা প্রকৃতি, তাতে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গাই নেই। সারা পৃথিবীর তথ্য-পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশ, এমনকী আমাদের দেশের অবস্থা যথেষ্ট ভালো জায়গায়। তবুও হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নয়। কারণ, এ রোগ ছাইচাপা আগুন। কখন যে লেলিহান শিখা নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে সব ছারখার করে দেবে, তার কেনও নিশ্চয়তা নেই। এমন একটা চরম অনিশ্চয়তার মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা।
সেই জায়গা থেকে বলাই যায়, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নানাবিধ পদক্ষেপ নিজে গণভবনে বসে ভিডিও কনফারেন্সে সবাইকে উৎসাহিত করা ও মনিটরিং এর এই উদ্যোগ দেশবাসীকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে।
এই যুদ্ধের ইতি টানতে আপামর দেশবাসী যেভাবে একজোট হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন, তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। এরই মাঝে কেউ কেউ অতি উৎসাহে বাজারঘাটে ঘুরে বেরিয়ে বা রাস্তায় অনাবশ্যক নেমে অন্যের বিপদ ডেকে আনছেন। এদের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ থাকবে, দয়া করে এসব করবেন না। সরকার বাজার দেকান খোলার বন্দোবস্ত করেছে। যেটুকু না হলে নয়, ঠিক সেইটুকু কিনেই নিজেকে গৃহবন্দি করে ফেলুন। নিজের ভবিষ্যৎ, পরিজনদের সুস্বাস্থ্য, আত্মীয়দের মঙ্গলের কথা ভেবে স্বার্থসিদ্ধিটাকে কখনই বড় করে দেখবেন না।
মনে রাখতে হবে, এই কঠিন যুদ্ধে জয় হাসিল করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিচয় দিতে হবে। সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করেছে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু অবিবেচক, স্বার্থপর মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তারা এখনও নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে সক্রিয়। পুলিশ-সেনাবাহীনি এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। সচেতনতার প্রচারই হেক, বা পুলিশি ধরপাকড়, মানুষের মধ্যে শুভবুদ্ধির যে উদয় হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু লড়াইটা একদিনের নয়, এক সপ্তাহের নয়। তাই যতই একাকিত্ব গ্রাস করুক, যতই ঘরে নিজেকে বন্দি মনে হোক, দুই বেলা খাবার জুটুক, ছাই না জুটুক, আমাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হওয়া উচিত, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাওয়া, যতদিন না দেশ পুরোপুরি করোনা-মুক্ত বলে ঘোষিত হচ্ছে।