আজই একটি গণমাধ্যমে পড়লাম গোপালগঞ্জে সাতটি তুলশী পাতা খেলে করোনা ভাইরাস হবে না এমন গুজবে পুরো গোপালগঞ্জে একটি তুলশী গাছেও আর পাতা সব তুলশী গাছগুলো পাতা শুন্য হয়ে যেন অভিশাপ দিচ্ছে গুজব রটনাকারীদের।
এদিকে করোনা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অযথা আতঙ্কে মাস্ক পরে ঘোরাঘুরির প্রয়োজন নেই।
আর এমন গুজবে গা ভাসিয়ে মাক্স কেনার হিড়িক পড়েযায় সে সুবাদে অতি মুনাফাখোর কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীর “পোয়াবারো”!
আর তা নিয়ন্ত্রণে নামতে হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতকে।
যেমন আজই ময়মনসিংহে সার্জিক্যাল মাস্ক বেশি দামে বিক্রি করায় দুটি ফার্মেসিকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শুধু এপার বাংলায় নয় ওপার বাংলায়ও করোনা ভাইরাস এর গুজবের জ্বরে ভূগছেন আম-জনতা।
যেমন কোলকাতার একটি সংবাদ মাধ্যমে খবর ছেপেছে,” রেড মিটেও করোনা ভাইরাস!” এমনই গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক এখন সকলের মধ্যেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীনের সংখ্যা যত বাড়ছে ততই সাবধান হচ্ছেন বাসিন্দারা। প্রশাসনও আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রটছে গুজবও। সেই গুজবের নবতম সংযোজন পাঁঠা বা খাসির মাংস থেকে করোনা ছড়ানোর প্রচার।
এমনিতেই গুজবের জেরে মুরগির মাংস বিক্রি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অনেকেই সেই গুজবে প্রভাবিত হয়ে মুরগির মাংসের দোকানের ধার দিয়ে যাচ্ছেন না। দিন দিন দাম কমছে মুরগির মাংসের। অনেক জায়গায় কাটা মুরগি কেজি প্রতি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাতেও খদ্দের নেই। ফার্মগুলি মুরগিতে ঠাসা। চাহিদা না থাকায় ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক মুরগির মাংসের দোকানের।
রগির মাংসের বদলে অনেকেই ভিড় করছেন খাসির মাংসের দোকানে। চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। রবিবার-সহ ছুটির দিনগুলিতে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই খাসি বা পাঁঠার মাংস হাতে মিলছে। চাহিদা বাড়তেই অনেক জায়গায় সেই মাংসের দামও চড়চড় করে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। কোথাও কোথাও কেজি প্রতি খাসির মাংসের দাম ৫৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০০ টাকা ছুঁয়েছে। তাই মুরগির মতো ছাগলের মাংসের দাম কমাতে সোসাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর পন্হা নিয়েছেন কেউ কেউ। দ্রুত ছড়িয়েও পড়ছে সে সব পোস্ট। জলের দরে রেড মিট কিনে তা কবজি ডুবিয়ে ভুরিভোজই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য!
সুতরাং বলছিলাম কি ইতিপূর্বে তো কিছু গুজবের ফলাফল আমারা জেনেছি বা দেখেছি, এই যে ধরুন পদ্মাসেতুতে শিশুর মাথা লাগবে এমন গুজবে ভর করে আমরা সারাদেশে বেশ’কজন হাবাগোবা,বুদ্ধি প্রতিবন্দ্বিকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে দুনিয়া ছাড়া করে দিয়েছি।
লবনের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজবে রাত বারোটায় যে পরিবারের বাংসরিক লবনের চাহিদা ১২ কেজি সে পরিবারও ২০ কেজি কিনে বাড়ি ফিরেছেন।
পিঁয়াজের বিষয়ে বৈশ্বিক সংকটে পড়ে তখনও পিঁয়াজ গুজবেও আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ৩ মাসের ষ্টক গোডাউন ও একদিনেই ফিনিস করে দিয়েছি।
সুতরাং সাধু সাবধান। বর্তমানে দেশে ৩ জন ব্যাক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা সকলেই জেনে গেছেন ইতিমধ্যেই তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। তবে আপনার পাশেই ঘাপটি মেরে বসে আছে কিছু অতি মুনাফাখোর অসাধু ব্যাবসায়ী অতি লাভের আসায় নানাহ গুজন রটায়।
অপরদিকে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যেও একটা শ্রেণী এমন সুজোগ কাজে লাগিয়ে গুজব রটিয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থে সদা প্রস্তুত।
তাই আসুন আমরা সকলে শুনবো – জানবো – অমনি বিশ্বাস না করে বাস্তবতা জানার চেষ্টা করবে, কে বলেছে,কেন বলেছে, কার থেকে জেনে বলেছে, কোথাও এমনটি ঘটছে কি না এসব বিষয় সঠিক ভাবে জেনে নেবো। গুজবে গা ভাসিয়ে দেবো না।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।