গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট গ্রহণ করছে না ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ব্যবসায়ীক স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়ে জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে সরকার অবস্থান নিচ্ছেন বলে গত রবিবার (২৬ এপ্রিল) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য নিরপেক্ষ একটা প্রতিষ্ঠানকে টেস্টিং কিট দিতে চেয়েছি। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে চায়। যেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ফি দিতে হবে। এই অর্থ গণস্বাস্থ্য দেবে না। তিনি বলেন, ‘গত ৪৮ বছরে গণস্বাস্থ্য কাউকে ঘুষ দেয়নি, দেবে না। গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট আসুক আর না আসুক, কাউকে ঘুষ দেব না। কিন্তু লড়াই করে যাব।’
ড. জাফরুল্লাহর এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। সোমবার (২৭ এপ্রিল) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে তিনি স্ট্যাটাস দেন।
খোকন বলেন, ‘ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন রাজনীতিবিদও। তিনি রাজনীতি করবেন এটাই স্বাভাবিক। করোনা কিট নিয়েও তিনি শুরু থেকেই রাজনীতি করে আসছেন। যেহেতু উনি বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত, তার সব রাজনীতি সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে। করোনা কিট নিয়ে উনি তাই করছেন। করোনা কিটের আবিষ্কারক ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন, ‘আমাদের কিন্তু সবাই সাহায্য করছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে বলেই আমরা রিএজেন্ট আনতে পেরেছি।’ ঘুষের অভিযোগ নিয়ে নিজের ফেসবুক পেইজে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঘুষের অভিযোগও তুলেছেন। কারণ তিনি জানেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে ইমেজ, এই অভিযোগ সবাই বিশ্বাস করবে। তিনি তার সেই নষ্ট রাজনীতিটাই এখানে করেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সাথে পুরো বিষয়টি যিনি তদারকি করেছেন সেই ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন ভিন্ন কথা। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, না না, অনেক সময় হয়তো তিনি এসব কথা বলে ফেলেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের বিরুদ্ধে আমি কিছুই বলিনি। এসব প্রক্রিয়া আমার জানা কারণ আন্তর্জাতিকভাবে আমি অনেক প্রজেক্ট ডিল করেছি। সমাধানও হয়ে যাবে।’
তিনি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিএনপির রাজনীতি না করার আহ্বান জানান। শেষে তিনি বলেন, ”করোনা কিট’ আর ‘জাফরুল্লাহ কীট’ এর মধ্যে পার্থক্য অনেক। কিট আর কীটের হিসাবটাও খুব সহজ। একটা রোগ সনাক্তকরণের যন্ত্র আরেকটা ক্ষতিকর পোকামাকড়। ড. বিজন শীলের আবিষ্কার ‘করোনা কিট’ এর মধ্যে ড. জাফরুল্লাহ ‘কীট’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।’
এদিকে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এক মন্তব্যের জেরে ক্ষুব্ধ হয়েছে দেশের নার্স সমাজ। শনিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে দেশের বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে করা তার ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য দ্রুত প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে নার্সদের মধ্যে। টেলিভিশন টক শোতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নার্সদের ২য় শ্রেণির অফিসার পদমর্যাদা দেয়া ঠিক হয়নি। নার্সরা ঠিক মতো কাজ করে না। এজন্য নার্সরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে না।’ তার এ বক্তব্যের পরপরই দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাজার হাজার নার্স বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অনেকেই ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেন।