চীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন গত কয়েক দশক থেকেই আফ্রিকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। কোনো দেশে প্রভাব বিস্তারের পূর্ব লক্ষ্য হিসেবে তারা কতগুলো কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তারই অন্যতম কৌশল হিসেবে তারা বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গুলোতে আর্থিক ঋণ সহায়তা প্রদান করে থাকে।
চীন সরকারের এসব আর্থিক ঋণ পরিশোধে কোন দেশ ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে সে দেশকে চরম মূল্য দিতে হয়। যেমনটা দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম দেশ শ্রীলংকার সাথে ঘটেছে। এছাড়া মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে চীন তাদের প্রভাব বিস্তারে অনেকাংশেই সফল। শ্রীলংকান সরকার চীন থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলংকার অন্যতম হাম্বানটোটা বন্দরটি ২০১৭ সাল থেকে পরবর্তী ৯৯ বছরের জন্য চীনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে চীনের বহু বছরের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র পাকিস্তানকেও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে ঋণ জর্জরিত করে ফেলেছে। একই কৌশলে চীন মায়ানমারের উত্তরাংশে অর্থনৈতিক এলাকা তৈরির মাধ্যমে ভারতের অপেক্ষাকৃত দূর্বল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অংশে শক্তিশালি অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে যা ভারতের জন্য মারাত্মক অশনি সংকেতই বটে। নেপালের বর্তমান সরকারের সাথেও চীন সরকারের সুসম্পর্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাকী রইল দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারত।
দক্ষিন এশিয়ায় চীনা প্রভাব বৃদ্ধিকে ভারত কখনোই মেনে নেয় নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ন সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছে। গত ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটলে তা পুরো এশিয়া সহ পুরো বিশ্ব রাজনীতিতে একধরনের উতকন্ঠা তৈরি করে। এ সংঘর্ষের তিন দিনের মাথায় ১৮ জুন নেপাল পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ৫৯ টি ভোটের মধ্যে ৫৭ টি ভোটের মাধ্যমে বিল পাশ করে ভারত নিয়ন্রিত লিম্পিয়াধূরা, লিপুলেখ ও কালাপানিকে নিজেদের মানচিত্রে যুক্ত করে নেপাল।
এ ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে ভূটান ভারতের নদী বরাবর ভূটান অংশে বাধঁ নির্মাণ করে ভারতের কিছু জায়গা পানিবন্দী করে রাখে। অনেকটা তিন দিক থেকেই ভারতকে চাপে রাখছে চীন। এ অবস্থায় দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতীয় চিন্তাবিদরা মনে করছেন এবার তারই পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবে নিতে চাচ্ছে চীন সরকার। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ৫১৬১ টি পন্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করেছে চীন। যার বাংলাদশের ৯৭ ভাগ পন্যই চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
আরও পড়ুন…. ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্য আবারো হাতাহাতি
এর আগে গত ৮ জুন চীনের একটি চিকিতসক দল বাংলাদেশকে সহায়তার অংশ হিসেবে দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যবেশনে আসে এবং চীনা ভ্যাক্সিনে বাংলাদেশকে আগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন।তাছাড়া অন্যতম সুখবর হলো ফারাক্কার বিপরীতে বাধঁ দিতে চীন থেকে ১০০ কোটি ডলার সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের এরুপ সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপকভাবে চিন্তিত মোদি সরকার। স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বজায় থাকলেও বর্তমানে সে সম্পর্কে কিছুটা হলেও টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করলেও গত এক দশকে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের হাতে অনেক বাংলাদেশীকে প্রাণ হারাতে হয়। সীমান্তে এসব হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় নি। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সিট মহল চুক্তির বাস্তবায়ন হলেও তিস্তা বাধঁ চুক্তি ভারতের সদিচ্ছার অভাবে বাস্তবায়িত হয় নি। বাংলাদশের প্রতি ভারতের এসব অবহেলাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহন করতে যাচ্ছে চীন।দক্ষিন এশিয়ায় চীনের অর্থনৈতিক কৌশলগত নীতি গুলো বাস্তবায়িত হলে চীন পুরো বিশ্বেই সুপার পাওয়ারে পরিণত হবে।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের পররাষ্টনীতি এবং কূটনৈতিক তত্পরতা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই যাওয়া উচিত বলে মনে করা হয়। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারত,চীন সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ভারসাম্যপূর্ন সম্পর্ক বজায় রাখাই হোক বাংলাদেশের কূটনীতির অন্যতম লক্ষ্য। তাহলে কেবল বিশ্ব দরবারে দেশীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
মোঃসুজন
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।