সাম্প্রতিক শিরোনাম

মঙ্গল গ্রহ জয়ের পথে মানব জাতি এবং মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশজুড়ে করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর আক্রমন, হাজারো মানুষের মৃত্যু, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং ব্যাপক প্রতিকূলতার মাঝেও ২০২০ সালটি হতে যাচ্ছে মঙ্গলগ্রহ অভিযানের এক নতুন সম্ভাবনাময়ের বছর হিসেবে। কারণ অনেকটা বিরতি দিয়ে চলতি ২০২০ এ জুলাই মাসে বিশ্বের চারটি দেশের স্পেস এজেন্সি এবং রিসার্চ সেন্টার তাদের মার্স প্রোব স্পেস ক্রাফট পাঠাতে চলেছে লাল দানব মঙ্গল গ্রহের বুকে প্রাচীন কোন প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধানে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার মার্স-২০২০ রোভার, চিনের এইচএক্স-১ মার্স অরবিটার এণ্ড রোভার, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সীর তৈরি রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন রোভার এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এই প্রথম বারের মতো তাদের হোপ মার্স প্রোব পাঠাতে যাচ্ছে মঙ্গলে এলিয়েন লাইফ এবং প্রাচীন জীবনের সন্ধানে৷ আর এই সবগুলো মিশন কিন্তু লাউঞ্চ করা হবে খুব সম্ভবত জুলাই ২০২০ এর মাঝামাঝি সময়ে। যা হোক উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর এসব মহাকাশ মিশন ও গবেষণা থেকে ভবিষ্যতে মানব জাতি মঙ্গল গ্রহে তাদের নতুন কলনী স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে যাবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।

সৌর জগতে থাকা আমাদের পাশ্ববর্তী মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতে মানব বসতি এবং কলনি স্থাপনের স্বপ্ন বুকে লালন করে শত বছর থেকে নিবীড় গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। আর মঙ্গল গ্রহকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই ছয় দশকের সময়ে বিশ্বের আটটি দেশ এবং তাদের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মোট ৪৮টি স্যাটালাইট মিশন পরিচালনা করেছে এবং চলতি ২০২০ এ এসে নতুন করে ভিন্ন মাত্রার আরো চারটি মিশন পরিচালনা করতে যাচ্ছে বিশ্বের বেশ কিছু মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ও দেশ। আর মঙ্গল গ্রহ বিজয়ের এই রথযাত্রায় এবারই প্রথম কোন মুসিলিম দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) নিজেদের নাম লেখাতে যাচ্ছেন মহাকাশ বিজয়ের ইতিহাসের পাতায়।

আসলে মঙ্গল গ্রহকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত ৪৮টি স্যাটালাইট মিশনের মধ্যে তৎকালীন সভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু একাই ১৭টি মিশন পরিচালনা করেছিল। আর এই মিশনের সবগুলোই করা হয়েছিল ১৯৯১ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টার হিসেবে কোল্ড ওয়ার চলাকালীন সময়ে। তৎকালীন সময়ে সভিয়েত ইউনিয়ন ২০২০ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানব মিশন পাঠানোর উদ্দ্যেশকে সামনে রেখে অত্যন্ত গোপনে মহাকাশ প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছিল। তবে ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হলে চরম আর্থিক সংকটের মুখে তাদের মঙ্গল জয়ের এই বিশাল প্রজেক্ট একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। আজ যদি সভিয়েত ইউনিয়ন টিকে থাকত, হয়তবা মঙ্গল গ্রহে মানব মিশন পাঠানোসহ মহাকাশ বিজয়ের আরো নতুন নতুন তথ্য উপাত্ত মানব জাতির সামনে চলে আসত।

তবে একক কোন দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু তার মহাকাশ গবেষণা এবং উন্নয়নে এখনো পর্যন্ত বাতিঘর হিসেবে বিশ্বের বুকে তার নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতার জানান দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’-কে এ মুহুর্তে বিশ্বের বুকে মহাকাশ গবেষণা, গ্রহ ও উপগ্রহে অভিযান কিংবা স্যাটালাইট প্রেরণের প্রথম স্থানীয় কোন গবেষনামুকলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু একাই ২২টি স্যাটালাইট মিশন পাঠিয়েছিল মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে। যেখানে কিনা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো একত্রে তার ২০% পাঠাতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আর যার চূড়ান্ত সুফল কিন্তু ভোগ করে যাচ্ছে সারা বিশ্বের মানব জাতি। তাছাড়া ১৯৯৭ সালের নাসার সোজোরনার রোভারের সাফল্যের পরে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আরো নতুন করে জানতে 2003 সালে মার্কিন জায়ান্ট নাসা এই রক্তিম গ্রহে ‘স্পিরিট’ ও ‘অপারচিনিটি’ নামক দুটি রোভার যান পাঠিয়েছিল। আর নাসার এই ‘স্পিরিট’ ও ‘অপারচিনিটি’ রোভার যান কিন্তু মঙ্গল গ্রহকে এক্সপ্লোর করে এর ভুত্বকের গঠন, আবহাওয়া সম্পর্কে দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাঠাতে থাকে পৃথিবীতে থাকা নাসার স্পেস সেন্টারে।

অন্যদিকে লাল দানব মঙ্গল গ্রহকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সী এ পর্যন্ত ৪টি মিশন পরিচালনা করেছে। তবে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সী এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি মঙ্গল মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম হলেও তাদের মিশনগুলো ছিল কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর। বিশেষ করে মঙ্গলের বুকে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির পাঠানো মারস এক্সপ্রেস স্যাটালাইট মিশন এই রক্তিম গ্রহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে গেছে। তবে মঙ্গল গ্রহে স্যাটালাইট মিশনের অংশ হিসেবে বর্তমান হালে রাশিয়া ২টি, জাপান ১টি, চীন ১টি এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারতও কিন্তু ১টি করে দূর যাত্রার মঙ্গল মিশন পরিচালনা করে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নজির বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। যদিও অর্ধ শতাব্দি ব্যাপী মানব জাতি ৪৮টি মঙ্গল জয়ের স্যাটালাইট মিশন পরিচালনা করলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র ২০টি স্যাটালাইট মিশন সফল হয়েছে। আর মঙ্গল গ্রহ জয়ের স্বপ্ন পূরণে এই সফলতার হার মাত্র ৪২% হলেও আদূর ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে নভোচারীসহ মহাকাশ যান এবং পর্যবেক্ষণ স্যাটালাইট প্রেরণে বর্তমানে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে।

এখানে আশার কথা হলো যে, আগামী ২০৩৫ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলের মাটিতে সরাসরি নভোচারীসহ বেশ কিছু মহাকাশ যান পাঠানোর মহা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা, স্পেস এক্স, ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি, চীন এবং রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এবং মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। তবে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলো যতই প্রতিযোগিতা করুক না কেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা হেতু আগামী ২১০০ সালের আগে মঙ্গল গ্রহে সরাসরি নভোচারীসহ মহাকাশ যান প্রেরণ হয়তোবা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে চার থেকে ছয়জন বা তার বেশি সংখ্যক নভোচারী নিয়ে সাবলীলভাবে অসীম মহাকাশে ছুটে চলার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন ইউনিক স্পেসসীপ এবং হাইব্রীড রকেট সিস্টেম এখনো পর্যন্ত ডিজাইন বা তৈরি করা সম্ভব হয় নি। যদিও ইউনিক স্পেস মাদার সীপ এণ্ড নিউ জেনারেশন রকেট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো এবং এক্ষেত্রে দেশগুলো কিন্তু বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কোন রকম ত্রুটি রাখছে বলে মনে হয় না।

আর তারই ধারাবাহিকরায় চলতি ২০২০ সালে লালা মঙ্গল গ্রহের বুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সীর পাশাপাশি এবারই প্রথম কোন মুসলিম দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত মহাকাশ প্রযুক্তিগত উন্নয়নে নিজের নাম লেখাতে যাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ জয়ের এই রথযাত্রা একেবারেই প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও তা কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য ঘুমন্ত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর জন্য এক অনুপ্রেরণামুলক দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে।

তবে অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে মহাকাশ গবেষণা কিংবা বিজয়ের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে মুসলিম বিশ্বের কোন দেশই প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে অংশীদ্বারিত্বের ভিত্তিতে তাদের নিজের যোগ্য স্থান করে নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বলতে শধুমাত্র মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা নয় বরং সার্বিকভাবে বাস্তব জীবন নির্ভর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে বুঝানো হয়েছে। আর মহাকাশ বিজ্ঞান তার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। যা হোক, বর্তমানে সারা বিশ্বে ১.৮ বিলিয়ন এর কাছাকাছি সুবিশাল মুসলিম জনসংখ্যার ৫০টির অধিক ইসলামিক দেশে ৩ হাজারের কাছাকাছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি নির্ভর গবেষণামুলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও এগুলো কার্যত ইসলামিক দেশগুলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই রাখতে পারছে না। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত মুসলিম বিশ্ব কিন্তু তার প্রযুক্তিগত চাহিদা লাঘবে প্রাচ্য এবং প্রাশ্চাত্যের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রয়েছে। সোজা কথায় বলতে গেলে মুসলিম বিশ্বের প্রায় ৯৫% দেশই আজ অব্ধি প্রযুক্তির জন্য কোন না কোন ভাবেই অন্য দেশের উপর সরাসরি নির্ভরশীল। তাই এক বিংশ শতাব্দীতে এসে তুরস্ক, ইরান, মালেয়শিয়া, বাংলাদেশ কিম্বা ইন্দোনেশিয়ার মতো বেশ কিছু মুসলিম দেশ অর্থনৈতিক এবং স্বল্প পরিসরে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে গেলেও বাস্তবিক অর্থে আজ পর্যন্ত বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর পর্যায়ে কিছু করার কিংবা প্রভাব বিস্তারের মতো যথেষ্ঠ সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ঠ অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...