দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার অসম যুদ্ধে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব কল্পনায় নিয়ে এ দেশের যে মানুষগুলি সকল প্রকার লোভ, মোহ এবং বৈসয়িক স্বার্থ ত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে যার যা আছে তা নিয়ে অংশ গ্রহন করে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিল তারাই কেন বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বশরীরে উপস্থিত নেতৃত্বে করোনার বিরুদ্ধে জাতীর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে হতাশাগ্রস্থ হচ্ছে।
এর কারনে হতে পারে স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রু ছিল দৃশ্যমান কিন্তু বর্তমান লড়াইয়ের শত্রু অদৃশ্যমান, থাকতে পারে অনেক রাজনৈতিক কারন, হতে পারে এ লড়াই এ অংশীজন সাধারন ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের খাবার বরাদ্ধকৃত ত্রান দলীয় লোকজনদের আত্মসাতের নানান কাহিনী।
শেষোক্ত ঘটনাটি পত্র পত্রিকা এবং সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত বিধায় তা আলোচনা করতে যেয়ে মনে পড়ছে প্রায় ৪৫/৫০ বছর আগের নিজ গ্রামের কিছু ছেঁচকি এবং সিঁদেল চুরির ঘটনা। এ ধরনের কোন চুরি হলেই গ্রামের মানুষ হন্যে হয়ে চোর খুঁজে বের করার চেষ্টা করত।
কোন সময় সন্দেহ বশত আবার কোন সময় নিশ্চিত হয়েই চোর ধরে এনে গ্রাম্য মাতব্বরের পালাঙ্গায় ( বৈঠক খানার সামনের জায়গা) কোন গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে দুইটা তথ্য নেওয়ার জন্য শুরু হত জিজ্ঞাসাবাদ।
মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদে সাধারনত হত না তাই শুরু হত মার । মারের চোটে চোরাই মালের সন্ধান দিলেও কোন ভাবেই থ্যালিতের ( শব্দটি পাবনার আঞ্চলিক ভাষার অন্তর্ভুক্ত যা আভিধানিক বাংলায় আশ্রয়দাতা এবং ইংরেজিতে Shealter master) সন্ধান দিতে চাইত না।
যদি শুধু চোরাই মাল উদ্ধার করে চোর ছেড়ে দেওয়া হত তাহলে কিন্তু চুরি বন্ধ হত না, কমবেশী হতেই থাকত। কিন্তু কোন ভাবে যদি থ্যালিতের নাম বের করে তার সামাজিক ভাবে বিচার করা যেত তাহলে কিছু দিনের জন্য অন্তত চুরি বন্ধ হত। এই সমস্ত চোর তার থ্যালিতের নাম না বলার কারনে মার খেতে খেতে মারা যেত তবুও থ্যালিতের নাম বলত না।
এই সংগে আমার শোনা একটি ঘটনা বলার লোভ সংবরন করতে পারছি না। সে সময় নাকি কিছু সাহসী এবং বুদ্ধিমান চোর মারের চোটে মুল থ্যালিতের নাম না বলে কোন সময় সদ্য প্রয়াত সাংসদ মরহুম ডিলু ভাইয়ের দাদা মরহুম হাসান উদ্দিন প্রাং, বাবা মরহুম লুৎফর রহমান প্রাং সাহেবের নাম আবার কোন সময় মরহুম নইমুদ্দিন বিশ্বাস, মরহুম জাফর উদ্দিন বিশ্বাস, মরহুম নুরুজ্জামান বিশ্বাসের নাম বলে মার বাঁচানো বা আত্মরক্ষার চেষ্টা করত।
যদিও শেষ মুহুর্তে টিকত না। ছোটবেলায় অনেক মুরুব্বিই চুরির ঘটনা এবং চোরের নাম বলে এ ধরনের ঘটনার কথা বলতেন।।মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্বাধীনতার পর দেশে ব্যাপক ভিত্তিক ত্রান দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে হয়েছে।
তখনও ত্রান চুরি হয়েছে। ত্রানের চাল, টিন, কম্বল চুরি নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজে বিরক্ত হয়ে জনসভায় চরম ঘৃনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ সহ চোরদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিয়েছেন। তাতে যে খুব বেশী লাভ হয়েছিল তা মনে হয় না। আবার প্রায় পঞ্চাশ পর করোনা সংকটের কারনে দেশ ব্যাপি ব্যাপক ভিত্তিক ত্রানও দিতে হচ্ছে আবার চুরির ঘটনাও একই মাত্রায়ই ঘটছে। আবার সরকার প্রধান সহ সিনিয়র মন্ত্রীগন বিচারের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে লাভের পরিমান খুব বেশী হবে বলে মনে হয় না। কারন এই সমস্ত ত্রান চোরদের পিছনে পৃষ্টপোষকতা অথবা আশ্রয়দাতা হিসাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত শক্তি আছে। সেটা হতে পারে রাজনৈতিক ব্যাক্তি কিংবা প্রশাসনিক ক্ষমতাধর কর্তা ব্যাক্তি।
যদি ত্রান চোরদের সাথে তাদের আশ্রয় দাতাদের খুঁজে বের করে বিচার আওতায় আনা কিংবা সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে বয়কটের ব্যাবস্থা না হয় তাহলে এ ধরনের চুরির ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে বলে মনে করার কোন কারন নাই। আর দুস্থ মানুষের মুখের গ্রাস চুরির ঘটনার মুলৎপাটন যদি করা না যায় তাহলে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির মুখের স্বাধীনতার চেতনা মুখেই থেকে যাবে তার বাস্তবায়ন হবে না। কারন শুধু বর্তমানে নয় যদি বিশ পঞ্চাশ বছর পর আল্লাহ না করুক এ ধরনের ত্রান দেওয়ার প্রয়োজন হয় তখনও কিন্তু যে রাজনৈতিক দল বা গোষ্টিই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ত্রান চুরি হবেই। কারন চোরের শিকড় আর ভাদাল ঘাসের শিকড় একই চরিত্রের। চোরের শিকড় মুলোৎপাটনের এখনই সময় এবং তা করা দেশ ও জাতীর স্বার্থে জরুরীও বটে।
মতামতঃ সমিত জামান, কলামিস্ট।