সাম্প্রতিক শিরোনাম

সামাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে প্রয়োজন পারিবারিক সুশিক্ষা


ভাবি, আমরা কি কোনো দিনই সভ্য হতে পারবোনা! অসভ্যতার অভিশাপ নিয়েই কি আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে চিরকাল! সমাজের প্রতিটি স্তরে অসভ্য ইতরদের নগ্ন বিচরণ। নিজ নিজ পদমর্যাদা বা অবস্থানের কথা ভুলে গিয়ে তারা মেতে ওঠে অসভ্যতায়, মেতে ওঠে বর্বরতায় । কেউ কথায়, কেউ কূট চালে, কেউ বক্র হাসির ভেতর, কেউবা আবার নিজের কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ ঘটায়। অসভ্যতা বা বর্বরতাকে নসিহত করে সমাজকে পরিশুদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাদের সুর তুলার কথা তাদের নিজেদেরই যখন মারাত্মক ভাবে ছন্দপতনে ঘটে তখন তা সমাজে সেন্দহাতীত ভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর জন্য কেবল তাদেরকেই নয়, পুরো দেশ ও জাতিকেই চরম মূল্য দিতে হয়। যা খুবই হতাশাজনক ও হৃদয় পীড়নকারী।


হ্যাঁ, অনলাইন পোর্টাল সহ দেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি এরকম একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা পড়ে আমি বেশ ব্যতিত ও আহত হয়েছি।
দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত এক সাংবাদিক তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। স্ত্রীও সাংবাদিক। সমকালে চাকরি করেন। প্রেম করে বিয়ে করেন এ সাংবাদিক দম্পতি। গত ২ এপ্রিল তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই স্বামী রেজাউল করিম প্লাবনের চেহারা পাল্টে যায়। স্ত্রী পারুল শশুরালয়ে যাবার কথা বললে তার কাছে একটি ফ্ল্যাট বা ৫০ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেয়ার দাবি করে প্লাবন। কিন্তু পারুল এতে অস্বীকৃতি জানালে প্লাবনের ভালোবাসার আসল রূপ ধরা পড়ে। নিত্য তাকে শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে।

গত ২৯ এপ্রিল মায়ের অসুস্থতার কথা বলে প্লাবন গ্রামের বাড়ি যেতে চাইলে পারুলও তার সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরে। কিন্তু প্লাবন রাজি না হয়ে উল্টো ইচ্ছে মতো পারুলকে প্রহার করে। পারুলের গর্ভে তার বাচ্চা এসেছে জানানোর পরও সে ক্ষান্ত হয়নি, উপরন্তু আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর প্রহারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ৫ মে নিজের শরীর খারাপ থাকা সত্বেও কয়েকজন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে প্লাবনের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারে তার শাশুরী অসুস্থ নয়। বরং শ্বশুর শাশুড়ি সহ প্লাবনের দুই ভাই একই দাবি তূলে। যৌতুক না দিলে তারা তাকে গ্রহণ করবেনা। এর প্রতিবাদ জানালে মারধর ও নির্যাতন করে পারুলকে বের করে দেয়। ঢাকায় ফিরে এসে পারুল বুঝতে পারে ওদের অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে তার গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়।

উপায়ান্তর না দেখে তিনি পুলিশের আশ্রয় নেন এবং থানায় নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ এনে প্লাবনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
একজন সাংবাদিকের নৈতিকতা যখন অশিক্ষিত রাখালের নৈতিকতাকেও হার মানায় তখন তা মানুষের চোখে লাগে বৈকি। সাংবাদিকতা পেশাটার প্রতি আমার বেশ দরদ রয়েছে। আমার এক অনুজ সাংবাদিক। বড় ভাইও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন অনেক বছর। আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে দু একটি পত্রিকাতে কাজ করেছি। তাই গুটি কতক অবাঞ্ছিতদের জন্য এ মহান পেশাটির গায়ে কলংকের দাগ লাগলে আমার বেশ রক্ত ক্ষরণ হয়।

আমি আহত হই। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খবর পরিবেশনের জন্য একদল সাংবাদিক অস্ট্রেলিয়ায় যায়। তন্মধ্যে একজন যাওয়ার পথে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে নারীঘটিত এক কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আমাকে বেশ আহত করে। জাতিকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর মতো লজ্জাজনক এ বিষয়টির বিরুদ্ধে তখনো আমি কলম ধরেছিলাম। একটি জাতীয় দৈনিক সহ দু একটি অনলাইন পোর্টালে তা প্রকাশ পায়।
সাংবাদিকতা প্রথম শ্রেণীর একটি পেশা। জাতির বিবেক হিসেবেও ধরা হয় সাংবাদিকদের।

ব্যক্তি, সমাজ তথা দেশ ও জাতির দিকনির্দেশক হিসেবেও কাজ করেন তারা। অস্বচ্ছ ও ঘুনে ধরা সমাজকে সত্য সুন্দর পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেন। ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে কেবল সত্য উন্মোচন করেই ক্ষান্ত থাকেননা তারা, সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে সমস্যা সমাধানের পথও বাতলে দেন। দেশ পরিচালনার জন্য যে কয়টি স্তম্ভ রয়েছে তন্মধ্যে সংবাদপত্র একটি। এ সংবাদপত্র যারা পরিচালনা করেন তারাই হলেন সাংবাদিক।


এমন একটি মহৎ ও গুণি পেশার অধিকারী হয়েও যদি কেউ এমন ঘৃণিত কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন তাহলে তার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কি ধারণা জন্মায় তা সহজেই অনুমেয়। প্লাবনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যদি সত্যি হয় তবে এ অপকর্ম কি কেবল তাকেই ছোট করবে? বরং পুরো সাংবাদিক সমাজের মুখেই তা চুনকালি এঁকে দেবে।


পারুল মামলা করেছে। অভিযোগ সত্য হলে আইন অনুযায়ী প্লাবনের বিচার হবে। যুগান্তর কতৃপক্ষও হয়তো তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। আমিও চাই তার যথোপযুক্ত শাস্তি হোক। তবে যে কথাটি বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এ সমাজে প্লাবনের মতো শিক্ষিত সাংবাদিকরাই কেবল অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়েনা বরং পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, সরকারী চাকরিজীবি, বিচারক, ম্যাজিসট্রেট সহ সকল শ্রেণীর শিক্ষিত পেশাদারী লোকের মধ্যেই অপরাধ প্রবণতা ব্যপক ভাবে লক্ষ্য করা যায়।

এ অপরাধ অশিক্ষিত মূর্খ শ্রেণীর অপরাধের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর। কারণ শিক্ষিত উচু শ্রেণীর এ অপরাধ সামাজিক অবক্ষয়কে মারাত্মক ভাবে ত্বরান্বিত করে। এ অবক্ষয়কে শুধু সাজা বা শাস্তি দিয়েই ঠেকানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষার। আর তা কেবল পুঁথিগত বিদ্যা ও স্কুল কলেজের অসম প্রতিযোগিতামৃলক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। সবার আগে প্রয়োজন পারিবারিক ভাবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা।


লেখক- সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, আয়ারল্যান্ড প্রবাসী প্রাবন্ধিক কলামিস্ট Shajed70@yahoo.com

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...