কাইফি লিওঃ পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে এ কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হলে কি হতে পারে তার প্রাথমিক বা প্রথম নমুনা আমরা দেখলাম। পৃথিবীর ফুসফুস তথা আমাজনের বিশাল অংশ যখন পুড়ে ছাই হয়ে গেল, আফ্রিকার বিশাল বিশাল বনভূমি যখন পুড়ছিল কিংবা অষ্ট্রেলিয়ার বিশাল বনভূমি যখন পুড়ে ছাই হয়ে গেল ৫০ লাখেরও অধিক প্রাণিকূলের মৃত্যু হলো তখনই আমাদের বোঝা উচিত ছিল পৃথিবী এখন একটা মহাবিপর্যয়ের সম্মূখীন হতে চলেছে।
পৃথিবীর প্রাণ নেই কিংবা ভাইরাসও জীবন্ত নয়। তবুও রুপক বা উপমার আংগিকে যদি বোঝানো যায় তবে তা খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে না। আমরা যখন রোগাক্রান্ত হই কিংবা জীবাণু বা ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের শিকার হই। তখন চিকিৎসা নিতে হয়। ওষুধের উপর নির্ভর হতে হয়। ঠিক তেমনি গল্পের আংগিকে আমরা যদি পৃথিবীকে মানব শরীরের মতো ভাবি। তবে আমাদেরও বুঝে নিতে হবে পৃথিবীর ফুসফুস (আমাজন) ক্ষতে দগদগ করে জ্বলছে। পৃথিবী এখন তার ভাইরাসকে ডিটেক্ট (শনাক্ত) করেছে। আর সেই ভাইরাস যে মানুষই এটা আমাদের কর্মকাণ্ডেই বুঝা যায়।
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব দাবি করা মানুষগুলোই পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। সমস্ত পশুপাখির বাসভূমি ধ্বংস করে তাদের ধ্বংস করে এগিয়ে যাচ্ছে। যেন এ পৃথিবীতে শুধু তারাই থাকবে।আর আমাদের স্বেচ্ছাচারীতার যখন চরমে পৌছালো তখন পৃথিবীও আমাদের সতর্কবাণী পাঠাচ্ছে। পৃথিবী এখন তার মেডিসিন গ্রহণ করছে। আর তাতেই আমরা এই ভাইরাসরা মারা পড়ছি সদলবলে। দিনদিন এই ভাইরাস আরও শক্তিশালী হচ্ছে পৃথিবী তার মেডিসিনের পাওয়ার হয়তো বাড়াচ্ছে। বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৯৭০ থেকে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ এর অধিক ভাইরাসের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।
গল্পের আংগিকে বুঝালেও এমনই হতে যাচ্ছে। আমরা যারা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে খুঁজে হয়রান তখন বিশ্বস্ত জার্নালসমূহ আমাদের জানাচ্ছে ষাটের দশকে প্রথম এই করোনা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানের Covid-19 হলো corona virus এরই একটি ভিন্ন strain বা sub type (genetic variation) যা ১৭ ই নভেম্বর ২০১৯ সালে (according to South Morning China Post) একজন ৫৫ বছর বয়সী ব্যক্তির মাধ্যমে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের ‘seafood market’ থেকে প্রথম ছড়িয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি বাদুড় থেকে। ধারণা করা হচ্ছে বাদুড় থেকে ভাইরাসটি প্যাংগোলিন (Pangolin) নামক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে এবং তা পরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই ভাইরাস চীন, আমেরিকা নয় বরং প্রকৃতিরই শাস্তি। এ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় কি হতে পারে??
এখন আমাদের সংশোধনের সময়। আমরা যদি নিজেদের এই হঠকারিতা পরিত্যাগ না করি এর চেয়েও বড় বিপদ আসন্ন। আমাদের প্রকৃতিকে বাচাতে হবে। প্রকৃতিকে বাচানোর জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। আমাদের বনভূমিকে রক্ষা করতে হবে। নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই আজ আমাদের গাছ লাগানোয় মনোযোগী হতে হবে। প্রাণীকূলকে রক্ষা করতে হবে। আমরা যদি এই স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারি তবে সামনে আমাদের আরও কঠিন সময় পার হতে হবে। এই ভাইরাসের ওষুধ নেই কি হতো যদি এটা বায়ুবাহিত রোগ হতো!!
বিজ্ঞানীদের ওষুধ বানানোর আশায় বসে থাকতেন!! কে জানে আজ আপনি বাসায় বসে ভাইরাস থেকে বাচার স্বপ্ন দেখতে পারেন কিন্তু এমনও হতে পারে আপনি বাসায়ই থাকতে পারছেন না, কোনো বায়ুবাহিত রোগ (ভাইরাস) ধাওয়া করছে আপনি পালাচ্ছেন শহর ছেড়ে গ্রাম, গ্রাম ছেড়ে হয়তো সেই পাহাড়ে, বনভূমিতে কিংবা আদিমযুগের গুহায়!!