পার্বত্য এলাকায় মারাত্মক সেনা সংঘাত চীনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ ছিল বলে বিশ্বাস করে ভারত। মার্কিন সরকারের নথিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে আরো বিস্তৃত করার জন্যই বেইজিং পরিকল্পিতভাবে ওই সংঘাতে জড়িয়েছিল।
গালওয়ান নদী উপত্যকায় ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ হয়। এলাকাটি উভয় পক্ষই তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড দাবি করে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। বেইজিংয়ের এই আগ্রাসী পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে ভারত বলেছে, এটা বেইজিংয়ের কৌশলের অংশ বলেই মনে করে নয়াদিল্লি।
লাদাখ অঞ্চলের সর্বশেষ মুখোমুখি সেনা সংঘাতকে বেইজিংয়ের সাম্রাজ্যবাদী নকশা হিসাবে বর্ণনা করেছে বলে মার্কিন নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৫ জুনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা গিয়েছিল। তবে মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন যে ওই সংঘর্ষে ৩৫ জন চীনা সেনাও মারা গিয়েছিল। যদিও চীনের পক্ষ থেকে হতাহতের খবর স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করা হয়নি।
দুর্গম পার্বত্য এলাকায় এই সংঘাত হাতে হাতে হয়েছিল, সেখানে কোন অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। তবে কেন হঠাৎ করে সীমান্তে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। চীন ও ভারত উভয় পক্ষই এ জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে যে, বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগর এবং হংকং-সহ তার সীমান্তের অন্যান্য অংশে আঞ্চলিক দাবিগুলো সুরক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সময়টাকে সফলভাবে ব্যবহার করেছে। তবে চীনের এই পদক্ষেপগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে বাঁধার মুখে পড়বে।
উভয় দেশের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর নামে পরিচিত এই প্রকল্প চীনের বিস্তৃত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ অবকাঠামোগত উদ্যোগের অংশ।
এই চুক্তির ফলে কমপক্ষে দুটি রুটের মধ্য দিয়ে বেইজিংকে সমুদ্রের উপরে সরাসরি প্রবেশের অনুমতি দেবে পাকিস্তান। ফলে চীনের বাণিজ্যিক শিপিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন রুটগুলো বেইজিংকে মালাক্কা প্রণালী ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে।
প্রকল্পগুলোতে নির্বিঘ্নে প্রবেশের পথ তৈরি করতে হলে চীনকে প্রথমে প্রতিদ্বন্দ্বী অঞ্চলে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের সরাতে হবে এবং চীনের নিয়ন্ত্রিত আকসাই চীন অঞ্চলকে লাদাখের যে এলাকায় সংঘাত হয়েছে সেখানে সংযুক্ত করতে হবে।
এই এলাকা থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরে ‘সাকসাম ভ্যালি’ যেটা চীনকে চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর করেছে পাকিস্তান। ফলে সেখানে চীনের প্রবেশ সহজ করতে গালওয়ান উপত্যকা থেকে ভারতীয় সেনাদের সরাতে আগ্রাসী সংঘাতে জড়িয়েছে চীনা সেনারা। এমনটাই বিশ্বাস ভারতের।