ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে না পেরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার নেতৃত্বাধীন উচ্চ শক্তিধর প্রতিনিধিদল এবং আইএসআই প্রধান রিয়াদ থেকে খালি হাতে ইসলামাবাদে ফিরে এসেছেন।
শুধু তাই নয়, ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ব্যর্থ হওয়ার অপমানের পাশাপাশি সৌদি সরকার জেনারেল বাজওয়াকে সম্মান জানানোর সিদ্ধান্তও বাতিল করে দিয়েছিল।
১৭ আগস্ট রিয়াদ সফরে যান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া তিক্ততা কাটানোর জন্য তিনি সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, সে বিষয়ে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি সৌদি আরব যেন পুরনো চুক্তি ফের বহাল করে, সে জন্য অনুরোধও জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাক সেনাপ্রধানের সেই আহ্বানে সাড়া দেননি সৌদি যুবরাজ।
কাশ্মীর ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে বৈঠক না করায় সৌদি আরবের সমালোচনা করেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি।
ফলে পাকিস্তানকে ধারে তেল সরবরাহ চুক্তি বাতিল করে দেয় সৌদি আরব। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে রিয়াদে পাঠিয়ে সম্পর্কের তিক্ততা কমানোর চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু তাঁর সেই উদ্যোগ কোনো কাজেই এলো না।
সৌদি আরব ধারে পাকিস্তানকে দেওয়া ৩.২ বিলিয়ন ডলার তেল সুবিধা বাতিল করার পর পাকিস্তানি সেনাপ্রধান সম্পর্কের তিক্ততা কমাতে রিয়াদ যাত্রা করেন।
২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের জয়ের পর সৌদি আরব বাকিতে দেশটিকে তিন বিলিয়ন ডলারের তেল সরবরাহ করার চুক্তি করেছিল।
ওআইসির বৈঠক নিয়ে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি সৌদি আরবকে হুমকি দেওয়ার পর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কে চরম তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে।
কোরেশির হুমকির পর সৌদি আরব এক বিবৃতিতে পাকিস্তানকে তেল সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেছে, এটা সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বিভক্ত করার সমতুল্য।
পাকিস্তানকে সৌদি আরবের দেওয়া এক বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা ফেরত দেওয়ার জন্যও ইসলামাবাদকে বলেছিল রিয়াদ। সৌদি আরবকে ঋণের সেই অর্থ ফেরত দিতে চীনের সাহায্য চাইতে হয়েছে পাকিস্তানকে।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ভারতবিরোধী কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে উঠেপড়ে লেগেছে পাকিস্তান।
তবে এতে সুবিধা তো হয়ইনি, উল্টো বেকায়দায় পড়েছে পাকিস্তান। ভারতকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইসলামাবাদ।
আজকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশে শুধু বহুত্ববাদী পদ্ধতিই কাজ করবে। এবং ঠিক তাই। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের তৎপরতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন বৈশ্বিক বাজারে বহুত্ববাদের বাস্তবতার সাক্ষ্য দেয়।
বিচ্ছিন্ন থেকে এখন আর কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। দেশ-রাষ্ট্রগুলোকে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং অংশীদারিকে পুনর্গঠনের জন্য নতুন চিন্তাভাবনা এবং সাহসী নেতৃত্বের প্রয়োজন।
পাকিস্তান এখনো অটোমান আমলের অপ্রচলিত রাজনৈতিক আখ্যানে জড়িয়ে রয়েছে এবং নতুন চিন্তাধারা তৈরি করতে বা মানিয়ে নিতে এবং সাহসী নেতৃত্বের জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তান তার রাজনীতি হিংসা, অসততা ও প্রতারণার কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
আজ পাকিস্তান হিন্দুদের ঘৃণা, দ্রুত বিকাশকারী ভারতকে ঈর্ষা, বিদেশি সহায়তার অর্থ লুটপাট ও অসাধু পরিচালনার জন্য বিশ্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
তালেবান ও ইসলামিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে নির্মূল করার লড়াইয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণার কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লস্কর-ই-তৈয়বা, হিজবুল মুজাহিদিন, জইশ-ই-মোহাম্মদের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো এখনো তৎপর রয়েছে দেশটিতে। ফলে ক্রমেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে পাকিস্তান।