জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জামাল ঊদ্দিন জানিয়েছেন এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন। তিনি বলছেন, বাংলাদেশ করোনা মহামারী-এর ৩য় ধাপে প্রায় পৌঁছে গেছে। এটি সর্বাধিক আগামী ৬-১০ দিন অতিবাহিত করবে। এখন দরকার সর্বাধিক সতর্কতা ও কোয়ারেন্টিন।এরপর আর সাবধানতার কোনও সুযোগ নেই।এরপর আর সাবধান হয়েও কোন লাভ নেই। এরপর আর সাবধান হবার প্রয়োজনও নেই।
তিনি আরও বলেন,আমরা এবার করোনা মহামারী-এর ৩য় ধাপে প্রায় পৌঁছে গিয়েছি। এটি সর্বাধিক আগামী ৬-১০ দিন অতিবাহিত করবে। এ সময় মোট সংক্রমিতদের ৪০-৫০ শতাংশ কোনও লক্ষণ ছাড়াই ভাইরাসটি বহন করবে এবং অন্যকে নীরবে-নিভৃতে সংক্রমিত করবে। রোগটি আক্রান্ত হওয়া সবার মাঝেই সাধারণ সর্দিকাশি, গলাব্যাথা আর জ্বরসহ উপস্থাপিত হবে। ভাইরাসজনিত রোগটির অস্বাভাবিক বিস্তার বা আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে সবার জন্যই সর্বাধিক সাবধানতা অবলম্বনের এটিই চূড়ান্ত আর শেষ সময়।
এরপর আর সাবধানতার কোনও সুযোগ নেই। এরপর আর সাবধান হয়েও কোনও লাভ নেই। এরপর আর সাবধান হবার প্রয়োজনও নেই।
ওদিকে আরেক লেখায় ” আগামী ১৪ দিন আপনার জীবন বাঁচাতে পারে: শিরনামে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ
ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ খুব দরকারি মত রেখেছেন । যা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। সেই লেখার গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশ হল জনস্বার্থে।
তিনি লিখেছেন, কর্তৃপক্ষ তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এর অর্থ হলো তাদের অবশ্যই নিজ বাড়িতে থাকতে হবে এবং ওই ১৪ দিনের মধ্যে তারা বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না।
★ এই ১৪ দিনের গুরুত্ব কী?
করোনাভাইরাসের বংশবিস্তারে সময় লাগে ৫.৫ দিন। আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণ দেখা যাক বা না যাক আক্রান্ত মানুষ ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। এর অর্থ হলো আক্রান্ত হওয়া থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি সংক্রমণের বিস্তার ঘটাতে পারে।
সেকারণে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের শরীরে ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাদের মধ্যে যদি লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে তাদের অবশ্যই সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
জ্বর ও কাশির মতো অন্য লক্ষণগুলো সেরে যাওয়ার পর এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুইবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই কেবল তারা বিচ্ছিন্নতা থেকে ছাড়া পেতে পারেন। স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকা কোনও ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।
১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা মানা না হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ইতোমধ্যে তো আক্রান্ত কেউ যতটা পথ তিনি বিমানে, বিমানবন্দরে, গাড়িতে বা বাড়িতে পাড়ি দিয়েছেন, তার মধ্যেই তিনি অনেককেই আক্রান্ত করে ফেলেছেন।
আরেকটু খতিয়ে দেখা যাক। কোনও মহামারিতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সরাসরি কতজন আক্রান্ত হতে পারে তা বেসিক রিপ্রোডাকশন নাম্বার বা আর.ও. (RO) নামে পরিচিত। কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে এই আর.ও. বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই নতুন ধারার সংক্রামক রোগ সবাইকে সন্দেহভাজনের তালিকায় ফেলেছে।
আর.ও. একের চেয়ে বেশি হলে এর বিস্তার ঘটতে শুরু করে এবং মহামারির কারণ হতে পারে। আর আর.ও. একের চেয়ে কম হলে রোগের বিস্তার কমতে থাকে এবং একপর্যায়ে শেষ হয়ে যায়। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী কোভিড-১৯ এর আর.ও. ২.৪৯ থেকে ২.৬৩ পর্যন্ত হতে পারে। এর অর্থ হলো একজন আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে ২.৫ জনেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।
কখনও কখনও এমনও হতে পারে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি দশজন বা একশ’জনের মধ্যেও রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারে। তাদের চরম সংক্রামক বলা হয়ে থাকে। চীন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে এরকম চরম সংক্রামক থাকার প্রমাণ মিলেছে। তবে আরও পরিবেশগত পরিস্থিতি; আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর আচরণ এবং চূড়ান্তভাবে জনগোষ্ঠীর কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার ওপরও নির্ভর করে।
সিডিসি’র আরেক গবেষণায় কোভিড-১৯ এর সিরিয়াল ইন্টারভাল উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সময় ও দ্বিতীয় আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সময়ের মধ্যে ব্যবধান ৩.৯৬ দিন।
এবার স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। বিদেশফেরতদের কতজন আক্রান্ত, কতজন নন, কতজনের লক্ষণ আছে বা কতজনের নেই বা কতজন চরম সংক্রামক, তা কেউ জানে না। এসব জানতে হলে পৌঁছানোর দিন থেকে তাদের ১৪ দিন পর্যন্ত সময় দিতে হবে।