নেপালের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে ও বাইরে ওলিবিরোধী হাওয়া বইছে। ক্রমশ কোণঠাসা হতে হতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মার গদি টলমল করছে। এমন সময় তাঁকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছে বেইজিং। কূটনৈতিক রীতি-নীতি দূরে রেখে ওলিকে বাঁচাতে বেশ তৎপর কাঠমাণ্ডুতে নিয়োজিত চীনের রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়ানকি। এমনটাই দাবি ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর।
আর পাঁচজন রাষ্ট্রদূত থেকে আলাদা এই ইয়ানকি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় এই নারী প্রায়ই নেপালি সাজে নিজের ছবি পোস্ট করেন। একই সঙ্গে সারা পৃথিবীর মানুষদের কাছে কাঠমাণ্ডু ভ্রমণের আহ্বানও জানান। দুই বছর ধরে নেপালে রয়েছেন চীনা এই কূটনীতিক। দূতাবাসে নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে সোনার গয়না আর লেহেঙ্গা চোলি পরে, জনপ্রিয় নেপালি গানের সঙ্গে নাচতে দেখা গিয়েছিল রাষ্ট্রদূতকে। যার প্রশংসা করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ওলি। তাঁকে নিয়ে কার্যত ক্ষুব্ধ নেপালের কূটনৈতিক মহল। দেশটির সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেপালের এক কূটনীতিক জানান, ইয়ানকির আচরণ কূটনৈতিক রীতি লঙ্ঘন করছে। ঘরোয়া রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াই রাষ্ট্রপতি বা রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি।
মাধব নেপাল এবং ঝালনাথ খানাল দলের অন্দরে ওলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের বিপর্যয় তৈরি করছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ৩০ জনই ওলির ইস্তফা চেয়েছেন বলে বলা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে। এমন পরিস্থিতিতে মাধব নেপাল ও ঝালনাথ খানালের বাড়ি গিয়ে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত হোউ। প্রধানমন্ত্রী ওলির ভবিষ্যৎ নিয়ে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির বৈঠক এ নিয়ে পাঁচবার ভেস্তে গেছে। আগামীকাল ফের বৈঠকে বসবে পার্টি।
পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গত বছর নেপাল সফরে গিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আর তার পর থেকেই কাঠমাণ্ডুতে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাঠমাণ্ডু পোস্টের সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘চীন-বিরোধিতার’ অভিযোগ এনেছিলেন রাষ্ট্রদূত ইয়ানকি।
নেপালবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভারতের তিনটি এলাকা লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে নেপালের মানচিত্রে জুড়ে সংবিধান সংশোধন বিল পাস করানোর ওলি সরকারের পরিকল্পনার পেছনেও সক্রিয় ছিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত।