বাংলাদেশ ও বিশ্বের দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের মানবিক অধিকার নিশ্চিতের আহবান জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিশ্ব শরনার্থী দিবস উপলক্ষে এ বিবৃতিটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সংস্থাটি। এতে মনে করিয়ে দেয়া হয়, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার বিশ্বের অন্য মানুষদের মতোই। তাই করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে যাতে তাদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি ভুলে না যায় সরকারগুলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৪ দশক ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়ে আসছে। কোভিড-১৯ তাদের মানবাধিকার নিশ্চিতের লড়াই থেকে সরে আসার কারণ হতে পারে না। মহামারি চলাকালীন তাদের দায়িত্ব নেয়া ও পাশে থাকা সবথেকে বেশি জরুরি বলে মনে করে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি জানায়, জুনের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গার করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে।
এরমধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৪০ জন রোহিঙ্গা। এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাস করেন। দীর্ঘ তিন বছর ধরে তারা এখানে রয়েছেন। ফলে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। ১৫ জুন পর্যন্ত দুই রোহিঙ্গার মৃত্যুও হয়েছে করোনায়। এখনো ব্যপক মাত্রায় এ ভাইরাস ছড়িয়ে পরতে দেখা যায়নি।
তবে সেখানে নিয়োযিত স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, সেখানে নতুন করে বৃদ্ধদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শিবিরগুলোতে করোনা ছড়িয়ে পরতে শুরু করেছে। একজন মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, যার দেহে করোনা ধরা পরবে তাকে মেরে ফেলা হবে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার আগ্রহেও ভাটা পড়েছে।
রোহিঙ্গাদের ইন্টারনেট ও মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটির দাবি, এ সেবা না থাকায় রোহিঙ্গাদের যৌন হয়রানি স¤পর্কে অভিযোগ জানানোর সুযোগ কমে গেছে। একইসঙ্গে করোনা ভাইরাস স¤পর্কে জানার সুযোগও পাচ্ছে না তারা। প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যতও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শিবিরগুলোতে তাদের মানসম্মত পড়াশুনার সুযোগ নেই বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থাটি।
মহামারির কারণে রোহিঙ্গারা এখন চাইলেই স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করতে পারছে না। নারীদেরও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে এ সময়ে। স্বাভাবিক সময়েই সেখানে প্রতিদিন ২৭ ভাগ নারী যৌন হেনস্থার শিকার হন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি। এরমধ্যে ৫৭ ভাগই শারীরিক নির্যাতন। এরমধ্যেই অনেক রোহিঙ্গা পরিবারকে তাদের প্রিয়জনকে দূরে চলে যেতে দিতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে যাকে অ্যামনেস্টি ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্থিতিশীল বলে উলেখ করেছে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এক মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও তারা সেখানে রয়ে গেছে।