বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ক’জন প্রজন্ম পড়েছে তা নিয়ে আমার সংসয় হয়।আমি আগেও বলেছি খুনি জিয়া,এরশাদ এই দেশের দু’প্রজন্মের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে গেছে তা না হলে রাজাকারের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার হতো।প্রজন্ম জাতীর জনকের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েই নাই সুধু কিনে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে্।খুবি লজ্জার কথা।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটির ২৫৬ পৃষ্ঠা শর্ষিণার পীর সম্পর্কে লেখা আছে।দেখে নাও।আমরা জাতি হিসেবে এতোটা দুর্ভাগা যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দেশে একজন স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকার, খুনি’কেও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে শর্ষিণার পীর সম্পর্কে লেখা আছে। সময় ১৯৫৪ এর নির্বাচন, তিনি বলছেন- “জামান সাহেব ও মুসলিম লীগ যখন দেখতে পারলেন তাদের অবস্থা ভাল না, তখন এক দাবার ঘুঁটি চাললেন। অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মওলানা সাহেবদের হাজির করলেন।
গোপালগঞ্জে আমার নিজের ইউনিয়নে পূর্ব বাংলার এক বিখ্যাত আলেম মওলানা শামসুল হক সাহেব জন্মগ্রহণ করেছেন। আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। তিনি ধর্ম সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। আমার ধারণা ছিল, মওলানা সাহেব আমার বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। কিন্তু এর মধ্য তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করলেন এবং আমার বিরুদ্ধে ইলেকশনে লেগে পড়লেন। ঐ অঞ্চলের মুসলমান জনসাধারণ তাকে খুবই ভক্তি করত। মওলানা সাহেব ইউনিয়নের পর ইউনিয়নে স্পিড-বোট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন এবং এক ধর্ম সভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, “আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে।“ সাথে শর্ষিণার পীর সাহেব, বরগুনার পীর সাহেব, শিবপুরের পীর সাহেব, রহমতপুরের শাহ সাহেব সকলেই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপণতা করলেন না। দুই চার জন ছাড়া প্রায় সকল মওলানা, মৌলভী সাহেবরা এবং তাদের তালবেলেমরা নেমে পড়ল।”
জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৮০ সালে আবু সালেহ মোহাম্মদ জাফর কে (শর্ষিণার পীর) শিক্ষায় স্বাধীনতা পুরষ্কার দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন, রাজাকারদের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন এবং রাজাকারের দোসরদের স্বাধীনতার পুরষ্কারও প্রদান করেছেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের স্বাধীনতা পুরষ্কার দিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্যে প্রাণ দেওয়া সকল মানুষকে, স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করা সকল মানুষকে অপমান করা হয়েছে। বাস্তবতা হল পরবর্তীতে কোন সরকার এই পুরষ্কার বাতিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। রাজনীতিবিদরা ভোটের স্বার্থে এসব পীর, ধর্মব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলে। বর্তমানে পিরোজপুরের এই পীরের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্যে সকল রাজনৈতিক নেতা পীরের কাছে হাজিরা দেয়। ২০১১ সালে শর্ষিনার পীরের ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় হুসেন মোহাম্মদ এরশাদ উপস্থিন হোন। এছাড়াও জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী (আওয়ামী লীগ) মো. মাহাবুবুর রহমান যোগ দেন। এছাড়া এরশাদ তাঁর শাসনামলে স্বরূপকাঠি উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শর্ষিনার মরহুম পীর নেছার উদ্দিনের নাম অনুযায়ী নেছারাবাদ নামকরণ করেন। স্বাধীনতার পদক যেমন দেওয়া যায় তেমনি তা ফিরিয়ে নেওয়াও সম্ভব। যতদ্রুত সম্ভব শর্ষিণার পীরের স্বাধীনতা পদক ফিরিয়ে নেওয়ার হোক।