একটা মানুষ আপনাকে সবচেয়ে মূল্যবান যে বিষয়টি উপহার দিতে পারে তা হচ্ছে প্রোডাক্টিভ টাইম, মানসিক সাপোর্ট এবং কিছু যুতসই পরামর্শ (গতানুগতিক গণ পরামর্শ না, যার যে অবস্থায় যেটা প্রয়োজন)। মানসিক অস্থিরতা সার্বজনীন। আপনি বলতে পারেন আমি নিজেই তো অনেক বুঝি, নিজেই মানুষকে পরামর্শ দিই। আপনি যতোই বোঝেন না কেন এই সিচুয়েশানে এটা করা উচিত সেটা করা উচিত না কিন্তু বিষয়টা যখন আপনার নিজের বেলায় তখন কিন্তু নিজেই নিজের সমাধান করা বা নিজেই নিজেকে পরামর্শ দেওয়া বেশ দুঃসাধ্য। এডভাইস সিক করা কিন্তু দোষের কিছু না৷ হয়তো এ কথাগুলো আপনি জানেন কিন্তু আরেকজন যখন আপনাকে নতুন করে বলবে তখন সেটা আপনাকে আলোড়িত করবে৷
প্রায়ই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে আল্লাহতায়ালা আমার জীবনে এমন কিছু চমৎকার, অনবদ্য মানুষ দিয়েছেন যাদের এক শব্দে ‘ব্লেসিংস’ বলা যায়৷ যারা আমাকে নানাসময়ে নানাভাবে সহায়তা করেন।তাদের জন্য আমি দু’আ করি। নিচের এই কথাগুলো আসলে সবারই প্রয়োজন।
১. জীবনের ৯৫ শতাংশই মূলত রেসপন্স আর মাত্র ৫ শতাংশ হলো ইভেন্ট। ইভেন্ট কী, সেটা বড় কথা না, কথা হচ্ছে আমরা কীভাবে সাড়া দিচ্ছি।
২. কারো মন্তব্যে কারো গন্তব্য নির্ধারিত হয় না কখনও।
৩. দুনিয়াতে আত্মমর্যাদা, সামাজিক সম্মান এবং ব্যক্তিত্বের প্রতাপ (অথচ বিনীত) নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে যেকোনো সিচুয়েশনকে ক্রিস্টালাইজড ইন্টারপ্রিটেশন করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
মানে যেকোনো কিছুকে ইতিবাচক দিকে ঘুরিয়ে দেবার সক্ষমতা। আমি জানি এটা লজিক্যালি ইজি, বাট ইমোশনালি হার্ড। তবে এটা না পারলে মানুষ এই ইমোশন দিয়েই হত্যা করে ফেলবে।
৪. “Don’t let behavior of the others can destroy your inner peace.”
নিজের পারমিশান ছাড়া কাউকে মনের সফট জোনে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া যাবে না। যদি কেউ প্রবশে করে তাহলে সেটা সার্বভৌমত্ব লংঘনের প্রশ্ন।
ব্যক্তিত্বের সার্বভৌমত্বই আত্মমর্যাদা। মানে লোকে যতই কালো বলুক আমার আলোর দিকটাতে আমার ফোকাস রাখা চাই। সার্বভৌমত্ব ছাড়া যেমন রাষ্ট্র হয় না, তেমনি ব্যক্তি স্বাতন্ত্রও গড়ে ওঠে না।
৫. কেউ যদি আপনাকে একটা কথা বলে হাসাতে পারে/রাগাতে পারে/কাঁদাতে পারে…সেক্ষেত্রে বুঝবেন আপনার মনোভাবের ওপর আপনার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ সেখানে অন্যরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হচ্ছে।
৬. এটা বিশ্বাস করতে শিখুন যে সমালোচনামূলক বা অপমানমুলক কথা সহজ ভাবে নিতে পারলে আপনার ইমোশনাল স্ট্রেংথ বাড়বে।
৭. আল্লাহ বলেছেন : তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। তো আপনি যদি ধৈর্য অনুশীলন না করেন তবে এটা বৃদ্ধি পাবে কী করে?
অনাকাঙ্ক্ষিত ছোট ছোট বিষয় (যদিও কষ্টকর হয় সাময়িক) আপনার ধৈর্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে এবং অধিকতর ধৈর্য বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেয়।
৮. যখন কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার করবে উত্তম কিছুর মাধ্যমে তাদের জবাব দেবেন। নাহয় চুপ থেকে ভাববেন সে আমাকে ধৈর্য অনুশীলনের সুযোগ দিচ্ছে। এতে আমি দিন দিন আল্লাহর নিকটবর্তী হচ্ছি। সো এটা কে গিফট হিসেবে নেবেন সবসময়।
৯. বহু মানুষ আমাদের বহুভাবে ছোট করে। কিন্তু সবার আচরণ তো আমাদের ঠিক করা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে নিজেকে মনকে সাগরের গভীরতা এনে দিতে হবে, আকাশের উচ্চতা দিতে হবে। যেন তারা আমাদের স্রোত বদ্ধ করে দিতে না পারে। ছুঁয়ে দিতে না পারে মানের সূদূর আকাশ।
১০. ইন্টাপ্রিটেশান শব্দটা খুব জরুরি। ভালো থাকা, মোটিভেটেড থাকাকে বস্তু/ব্যক্তিজগতের উর্ধ্বে নিয়ে গিয়ে কেবল নিজের আত্মমর্যাদাবোধ ও আল্লাহর ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত করতে হবে। তাহলে সত্যিকার ফুলফিলমেন্ট অর্জন করতে পারবো আমরা।
১১. পৃথিবীতে সাফল্যের জন্য যে গুনগুলোকে দায়ী করা হয় তাতে নাম্বার ওয়ানে আছে ইকিউ, বাস্তবজগতে আইকিউ তেমন কিছু না, অন্তত সাফল্যের বিচারে। EQ = Emotional Quotient. এটাকে ইমোশনাল ইনটেলিজেন্সও বলে।
লেখকঃ জি.এম ইস্রাফিল, কলামিস্ট।